বিশ্ববাজারে বেড়েই চলছে স্বর্ণের দাম। ঊর্ধ্বমুখী এই প্রবণতায় ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছাড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০০ ডলারের মাইলফলক।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৫২ দশমিক ৫২ ডলারে। তবে সেশনের শুরুতে এটি রেকর্ড ৩ হাজার ৫০০ দশমিক ০৫ ডলারে পৌঁছেছিল।
আর ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৪৬৪ দশমিক ৫০ ডলারে বেচাকেনা হচ্ছে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সুদের হার দ্রুত কমানোর আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করেন যে, তা না হলে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে, ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল তার অবস্থানে অনড় থেকে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে মত দেন। এ অবস্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, ফলে তারা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন।
কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ এবং ট্রাম্প-পাওয়েল দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা ধীরে ধীরে মার্কিন সম্পদের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন। সেই অনীহা ডলারের দুর্বলতায় রূপ নিচ্ছে, আর সেই দুর্বলতাকে পুঁজি করেই স্বর্ণ উঠে যাচ্ছে রেকর্ড উচ্চতায়।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেন, স্বর্ণের দামে সাময়িক সংশোধন হতে পারে, তবে চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাজারে স্বর্ণের চাহিদা বজায় রাখবে।
জার্মানির হেরায়াস মেটালসের মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার জুম্ফে বলেন, স্বর্ণের দামের সাম্প্রতিক এই ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ফেড চেয়ারম্যান পাওয়েলের ওপর প্রকাশ্য আক্রমণ। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আর্থিক নীতির উদ্বেগ অব্যাহত থাকায় স্বর্ণের চাহিদা আরও বাড়তে পারে।
অন্যদিকে, চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ট্যারিফ অপব্যবহারের অভিযোগ এনে সতর্ক করেছে, যা বিশ্ববাজারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। এশীয় শেয়ারবাজারগুলোও এই অনিশ্চয়তার প্রভাবে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে।
স্টোনএক্সের বিশ্লেষক রোনা ও’কনেল বলেন, সাধারণত শেয়ারবাজারে এমন পতনের সময় বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ বিক্রি করেন। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র দেখা গেছে—বিনিয়োগকারীরা বরং স্বর্ণের দিকেই ছুটছেন।