বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন

ইসির বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ তুলে যা বললেন সারজিস

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২৫ প্রদর্শন করেছেন
এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও প্রশাসনিক পেশাদারিত্ব নিয়ে গভীর প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর অনাস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকা সত্ত্বেও’ শাপলা প্রতীক না দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসি ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ করছে।
তার মতে, স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠান এভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা করতে পারে না এবং এটি ইসি কর্তৃক একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
এনসিপি এই প্রতীক পেতে আইনগত ও প্রয়োজনে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রশাসনের ‘দলীয়করণ’ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
সারজিস আলম প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ডিসি, এসপি, ইউএনওসহ মাঠপর্যায়ের নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ‘তোষামোদ’ এবং ‘পেশাদারিত্ব বজায় না রেখে’ বিভিন্ন দলের ডিসি-এসপি হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তার মতে, কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করে জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তার যুক্তি, আওয়ামী লীগকে স্বৈরাচারী হতে সহযোগিতা এবং সরকারি দল হওয়ার বৈধতা দিয়েছে জাতীয় পার্টি, তাই জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের মতো একই পথে যেতে হবে।
 
পিআর পদ্ধতি ও এনসিপি-গণঅধিকার পরিষদ একীভূতকরণ
 
পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এনসিপি নেতা বলেন, বাংলাদেশের জন্য উচ্চকক্ষে পিআর প্রাসঙ্গিক, কিন্তু নিম্নকক্ষে নয়। এই কারণে তারা জামায়াতের সঙ্গে আন্দোলনে নামছেন না। তবে জুলাই সনদ, সংস্কার এবং বিচারের বিষয়ে জামায়াতের অন্যান্য দাবির প্রতি তাদের ঐকমত্য ও সহযোগিতা বহাল থাকবে।
অন্যদিকে, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি’র একীভূত হওয়ার আলোচনা এখনো চলছে। আলোচনা সফল হলে তা প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।
জুলাই সনদ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব
 
সারজিস আলম জুলাই সনদ বাস্তবায়নে উত্তম পন্থা হিসেবে সংসদের কিছু সদস্যকে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করার কথা বলেন, যারা সংবিধান প্রণয়ন করবেন। তার মতে, এটাই সেই আইনি ভিত্তি যা প্রকৃত কার্যকারিতা নিশ্চিত করবে।
এছাড়াও, তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের কঠোর সমালোচনা করেন। পঞ্চগড়ের স্কুলে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের বিষয়টি ‘ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান’ করে তিনি বলেন, স্কুল পর্যায়ে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থাকা উচিত এবং এ ধরনের প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান।
সারজিস আলম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, তারা প্রশাসনকে তোষামদি প্রশাসন বা ‘টাকার জুয়ারি’ হিসেবে দেখতে চান না। তিনি অভিযোগ করেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এখনো মামলা বাণিজ্য, ঘুষ দুর্নীতির জোয়ারে ভাসছে এবং দলীয় সুপারিশ ছাড়া থানায় এজাহার বা জিডিও করা যাচ্ছে না। প্রশাসনকে শোষকের বদলে সেবক হিসেবে দেখতে চান বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ