শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৮ অপরাহ্ন

‘বাংলাদেশ হারুক বা জিতুক, কাবরেরার কিছু যায় আসে না’

স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২৫ প্রদর্শন করেছেন

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রায় ২৫ হাজার দর্শক যখন জয় সমতুল্য ড্রয়ের আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনই বিনা মেঘে বজ্রপাত। শেষ বাঁশি বাজার ৩০ সেকেন্ড আগে হংকং ম্যাচ জিতে যায় ৪-৩ গোলে। এই ফলাফলে ক্ষুব্ধ, হতাশ ফুটবলপ্রেমীরা। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের পর হংকংয়ের কাছেও শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে হার। এর দায় নিয়েছেন স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা নিজের ওপর। তবে বারবার কোচের ভুলকে তার বিদায়ের দাবি জোরালো করে তুলেছে।

বাংলাদেশ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করা কোচ কাবরেরা। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নিয়োগ পাওয়া এই কোচের মেয়াদ একাধিকবার বাড়ানো হয়েছে। সবশেষ নবায়ন হয়েছে ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। অথচ তিন বছরেরও বেশি সময় কেটে গেলেও দলের পারফরম্যান্সে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি নেই। কাবরেরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩৪টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে জয় ৯টি, ড্র ৮টি এবং হার ১৭টিতে। বেশির ভাগ হারের একই গল্প শেষ মুহূর্তে গোল হজম। যেমনটা ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতের ম্যাচে। দল ডুবছে তার খামখেয়ালিপনায়।

ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে এদিন এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় পর্বের ম্যাচ কাবরেরার সাম্প্রতিক ব্যর্থতার সবশেষ নজির। শুরুতে এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হার। খেলা যখন শেষ হবে, তখনই নিজেদের ভুলে গোল হজম করেন জামাল ভূঁইয়ারা। নিশ্চিত ড্র হওয়া ম্যাচ এভাবে হারতে দেখে অনেকে কান্না চেপে রাখতে পারেননি। দর্শকদের সব ক্ষোভ কোচ কাবরেরার ওপর।

জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার কায়সার হামিদের চোখে ম্যাচের শুরু থেকেই কোচের পরিকল্পনায় সমস্যা দেখা গেছে। শুরুর একাদশে অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের না রাখাটা ছিল কোচের সবচেয়ে বড় ভুল। তিনি বলেন, ‘কাবরেরা বিদেশি কোচ, তার কাছে বাংলাদেশ হারলেই কি, জিতলেই কি। তাই যদি না হয়, তাহলে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জামাল ভূঁইয়া, শমিত সোম, ফাহামিদুল ইসলামের মতো খেলোয়াড়দের শুরুর একাদশে রাখা হলো না কেন।’ সাবেক এই ডিফেন্ডার মনে করেন, এবার বাফুফের কোচ পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কায়সার হামিদ বলেন, ‘কোচ লম্বা সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তবু উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। ফল আশানুরূপ হচ্ছে না। আমি মনে করি যদি একজন কোচ বারবার ব্যর্থ হয় তার পরিবর্তন করা উচিত।’

জাতীয় দলের সাবেক ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলির কথায়, ‘আমরা হংকংয়ের বিপক্ষে জিততে মাঠে নেমেছিলাম। ৩-৩ গোলে যখন ড্র চলছে, ফুটবলারদের সঙ্গে কোচের উল্লাস না করে শান্ত থেকে আরও এক গোল কিভাবে করা যায় সেই পরিকল্পনা করা উচিত ছিল। সেখানে আমরা মনোযোগ হারিয়ে গোল হজম করে ম্যাচ হেরে যাই।’

গত ১০ জুন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। অকারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা, খেলোয়াড়দের অদলবদল, অচেনা কৌশল। সেই ম্যাচেও হারতে হয়েছিল একই ভুলের কারণে। তখনই কাবরেরাকে নিয়ে সমালোচনা বাড়ছিল, অনেকেই তার বরখাস্তের দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি বাফুফে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ ফুটবল কি সত্যিই এগোচ্ছে, নাকি এক স্প্যানিশ পরীক্ষাগারের অতল অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে? হামজা, শমিত, মোরসালিনের মতো খেলোয়াড়দের নিয়েও জয় থেকে কেন দূরে বাংলাদেশ। প্রতিবারই কেন শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে পয়েন্ট হারাতে হয়। কেন শিক্ষা নেয় না দল। দায়টা কার, কোচ, খেলোয়াড়, নাকি পুরো সিস্টেমের?

এদিকে হংকং চায়নার কাছে হতাশার হারের ১২ ঘণ্টাও না যেতে শুক্রবার দুপুরে হামজা, জামালদের হংকংয়ের ফ্লাইট ধরতে হয়েছে। মঙ্গলবার এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে নিজেদের ফিরতি ম্যাচ খেলার জন্য হংকংয়ে উড়াল দেওয়ার আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বিমানবন্দরে কথা বলেছেন। ম্যাচে নিজের ও বদলি চার ফুটবলারের পারফরম্যান্স নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি, শমিত, ফাহামিদুল ও জায়ান যখন একসঙ্গে ওয়ার্ম-আপ শুরু করি, তখন ওদেরকে বলেছি আমরা যখন নামব, তখন ম্যাচের গতিপথ বদলাতে হবে। আমাদের চারজনের ইমপ্যাক্ট ভালো ছিল। চারজনই শুরুর একাদশে খেলতে চাই। সব মিলিয়ে আমরা ভালো খেলেছি।’

বাংলাদেশের ফ্লাইট ছিল দুপুর দেড়টায়। ফ্লাইট ছাড়ার দেড় ঘণ্টা আগে হংকং চায়নার ভিসা পান ফাহামিদুল ইসলাম। তিনি ইতালি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসার পর ফেডারেশন তার পাসপোর্ট ভিসার জন্য জমা দেয়। ভিসা পেতে খানিকটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ দলের সবাই পাসপোর্ট নিয়ে এয়ারপোর্ট রওয়ানা হন শুধু ফাহামিদুল ছাড়া। তার পাসপোর্ট তখনো চীনা দূতাবাসে। শুক্রবার ছুটির দিনেও চীনা দূতাবাস বাংলাদেশের ফুটবলারকে বিশেষ ব্যবস্থায় ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। বাফুফে স্টাফ সাড়ে এগারোটায় ফাহামিদুলের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বারোটার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছান। জামাল ভূঁইয়ারা হোটেল ছাড়ার আগে সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি তাবিথ আউয়াল।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ