সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফুঁসছে আফগানরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪ প্রদর্শন করেছেন

দিন যত যাচ্ছে, তিক্ত হচ্ছে আফগান-পাকিস্তান সম্পর্ক। সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে আফগানিস্তানের ভেতরে ঢুকে পাকিস্তানের একের পর এক বিমান হামলায় ফুঁসে উঠেছে দেশটির জনগণ। বিক্ষোভে গমগম করছে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের রাজধানী শহরগুলো। ৯ অক্টোবর প্রথম দিনের হামলার পর থেকেই বড় হতে থাকে বিক্ষোভ।

বিক্ষোভকারীরা তাদের বক্তব্যে বলছেÑ‘পাকিস্তান একটি আগ্রাসি রাষ্ট্র। যদি সরকার অনুমতি দেয় তবে প্রয়োজনে তারা সীমান্তে গিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবে।’ এর মধ্যেই সীমান্তে আবার নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে নতুন যুদ্ধবিরতি আলোচনায় দোহায় ছুটেছে দুই দেশই।

শুক্রবার রাত ৮টায় ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শেষের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পাকতিকা প্রদেশের উরুগুন ও বারমাল জেলায় বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। হামলায় ১৭ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত এবং ১৬ জন আহত হন। সরকারি ঘোষণায় অবশ্য বলা হয়েছে নিহত ১০ জন এবং আহত ১২। নিহতদের মধ্যে স্থানীয় ক্রিকেট ক্লাবের খেলোয়াড়রা ছিলেন। অন্য নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল।

আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় তিনজন খেলোয়াড় (কবির, সিবগাতুল­াহ ও হারুন) শহীদ হয়েছেন।’ খেলোয়াড়দের মৃত্যুর প্রতিবাদে নভেম্বরে ত্রিদেশীয় টি ২০ সিরিজ ‘পাকিস্তান-আফগানিস্তান-শ্রীলংকা’ থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। পাকিস্তানের লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডির স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ওই সিরিজ।

রাজধানী কাবুলে পাকিস্তানের প্রথম বিমান হামলা থেকেই গমগম করছে পুরো ভ‚খণ্ড। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিনই পাকিস্তানবিরোধী স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে উঠে আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি শহর। বিশেষ করে খোস্ত, পাকতিয়া, পাকতিকা, নাঙ্গারহার, কাবুল, বাদাখশান, বাগলান শহরে। যুদ্ধবিরতির ৪৮ ঘণ্টায় অবশ্য বিক্ষোভ চোখে পড়েনি।

তবে পরিস্থিতি এখনো থমথমে। সীমান্ত জনপদের আতঙ্ক পাকিস্তানবিরোধী ক্ষোভ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো আফগানিস্তানে। এর আগে যুদ্ধবিরতির মধ্যেই আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সেনাবাহিনীর এক ক্যাম্পে আÍঘাতী হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। ঘটনায় ৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। আহত ১৩ জন। পুলিশ বলছে, পাকিস্তানের তেহরিক-ই তালেবান (টিটিপি) মীর আলী শহরের ওই ক্যাম্পে এই হামলা চালায়।

আলোচনায় দুই দেশ : আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তে চলমান সংঘর্ষে আলোচনায় বসেছে দুই দেশ। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় এই আলোচনা চলছে। শনিবার এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মৌলবি মোহাম্মদ ইয়াকুব মুজাহিদের নেতৃত্বে ইসলামিক আমিরাতের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল দোহার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে।

আফগান প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক এবং গুয়ান্তানামো বে-এর সাবেক বন্দি মোল্লা আব্দুল হক ওয়াসিক এবং আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এবং আইএসআই প্রধান আসিম মালিক। বিবৃতিতে ইসলামিক আমিরাতের (তালেবান) মুখপাত্র মুজাহিদ এই হামলাকে ‘উসকানিমূলক’ ও ‘সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ বলে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, তারা চাইলেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালাতে পারত, তবে ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টাকে অগ্রাধিকার দিতে চাচ্ছে তারা। বলেন, আলোচনা চলাবস্থায় আফগানিস্তান প্রতিশোধমূলক পালটা হামলা চালাবে না আফগান সরকার।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ