বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে জামায়াত ইসলামীর সাফল্য খুব একটা না থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে দলটি নানা চড়াই-উৎরাইয়ে মধ্য দিয়ে গেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াতের কখনো নিবন্ধন বাতিল, কখনো নিষিদ্ধ কখনো বা হারিয়েছে নিজস্ব দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা কিংবা লাঙল প্রতীকের সঙ্গে জামায়াতও অংশ নিয়েছিল দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে।
স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে জামায়াত দলগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালে। ওই বছর জাতীয় নির্বাচনে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বরাদ্দের জন্য আবেদন করে নির্বাচন কমিশনে। পরে নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে ‘দাঁড়িপাল্লা’ পায় দলটি।
এরপরে দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আরও পাঁচটি সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন যখন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন চালু করে তখনও চাহিদা অনুযায়ী দাঁড়িপাল্লা প্রতীক দেওয়া হয় জামায়াত ইসলামীকে।
হাইকোর্টে এক রিটের আদেশের ২০১৩ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করা হয়। পরে তাদের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, জামায়াতের প্রতীক নিয়ে ১৯৮৬ সালেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তখন তারা বলেছে, এটা তাদের অনেক পুরানো প্রতীক। এই প্রতীক নিয়েই ১৯৭০ সালেও ভোট করেছিল। ইসি তখন এই প্রতীক বহাল রেখেছিল।
২০১৬ সালে রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
তখন উচ্চ আদালতের চিঠির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৯ই মার্চ ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাদ দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। ফলে নির্বাচনে দল বা প্রার্থীর প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক বাদ হয়ে যায়।
যে কারণে ২০১৮ সালে জামায়াতকে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিতে হয় ধানের শীষ প্রতীকে।
গত বছরের জুলাই আগষ্টের ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় জামায়াতকে নিষিদ্ধ দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর উঠে যায় সেই নিষেধাজ্ঞা।
চলতি বছরের জুনে আদালতের নির্দেশে নিবন্ধনসহ আবারো দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পায় জামায়াত। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই প্রতীকের পক্ষে এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে দলটি।