কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও পপ সুপারস্টার কেটি পেরি অবশেষে তাদের রোম্যান্সের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলেন। প্রথমবারের মতো একসঙ্গে জনসমক্ষে এলেন এ দুই জগতের দুই বাসিন্দা। সম্প্রতি কেটি পেরির জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্যারিসের ক্রেজি হর্স ক্যাবারে শোতে অংশ নেন তারা।
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে হাত ধরাধরি করে হাসিমুখে বের হতে দেখা গেছে কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোকে। সেদিন পেরি পরেছিলেন লাল পোশাক, আর ট্রুডো ছিলেন কালো পোশাকে। বন্ধুত্বের সীমা পেরিয়ে কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর সম্পর্ক যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, তা আর লুকোচাপার মধ্যে নেই। শান্তা বারবারার উপকূলে ছুটির মুহূর্ত কাটাতে গিয়ে দুজনকে দেখা গেল একদম সিনেমার রোম্যান্সে। দুজনের ইয়টের ডেকে আরামদায়ক সময়, হাসি-ঠাট্টা আর হঠাৎই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা—ফটোসাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ল তাদের খোলামেলা সেই চুম্বন। ভক্তদের জন্য এটি ছিল সেই মুহূর্ত, যখন গুঞ্জন পরিণত হলো নিশ্চিত সত্যে।
বিশ্বজুড়ে সামাজিক মাধ্যমে তাদের রোমান্টিক ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়তেই এই অসাধারণ জুটিকে নিয়ে নেটিজেনদের মাঝে আলোচনার ঝড় ওঠে। ইয়টের সেই ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত প্রকাশ্যে আসার ঠিক দুদিন পর—মঞ্চে উঠে পপ তারকা কেটি পেরি দেখালেন তার স্বভাবসুলভ দুষ্টু রসিকতা। কনসার্টে দর্শকদের মাঝখান থেকে এক ভক্ত প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে প্রশ্ন করলেন—আপনি কি আমাকে বিয়ে করবেন? মুহূর্তেই থমকে দাঁড়ালেন পপতারকা। মুচকি হেসে মাইকের সামনে ঝুঁকে বললেন— আমি নাকি সিঙ্গেল? দর্শকরা হেসে উঠলেন। কিন্তু বার্তাটা স্পষ্ট—ট্রুডোর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি ইঙ্গিত দিলেন।
উল্লেখ্য, দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা। একজন রাজনীতিবিদ— কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। অন্যজন চলতি শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় পপ তারকা কেটি পেরি। দুজনকে এক সুতায় বেঁধেছে প্রেম। শুরুতে লুকিয়ে দেখা, নৈশক্লাবে যাতায়াত এবং গোপনে প্রমোদতরীতে ভ্রমণ। তবে প্রেম কি চাইলেই গোপন করা যায়। তাই হয়তো তারা ভেবেছেন, যথেষ্ট হয়েছে, এবার প্রকাশ্যে আসা যাক। অবশেষে কেটি পেরি আর জাস্টিন ট্রুডোর প্রেম এখন ‘আনুষ্ঠানিক’ স্বীকৃত।
কয়েক বছর আগেও কেউ যদি বলত পপ তারকা কেটি পেরি নাকি কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ডেট করছেন—অধিকাংশই হয়তো ভেবেই নিতেন— মজা করছে। কিন্তু বাস্তবে ২০২৫ সালে এসে সেই অসম্ভবই সম্ভব হয়েছে— ঘটনা সত্যি।
চলতি বছরের গ্রীষ্মে প্রথমবার তাদের একসঙ্গে দেখা যায়। শুরুতে ফিসফাস—তারপর ছবি ও ভিডিও—ধীরে ধীরে রটে যায় বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু। কেটির লাইফটাইমস ট্যুর চলাকালেই কতবার দেখা গেল দুজনকে কাছাকাছি সময় কাটাতে। অবসরে তারা একে অপরের হাত ধরে ঘুরছেন, প্রকাশ্যে আদর—সব মিলিয়ে স্পষ্ট ব্যাপারটা— আর ‘শুধু বন্ধু’ নয়; এর চেয়েও বড় কিছু।
এই প্রেমের গল্পের শুরু দুজনেরই সম্পর্ক ভাঙার মধ্য দিয়ে। ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেওয়া সুপারস্টার কেটি পেরি—অরল্যান্ডো ব্লুমের সঙ্গে ৯ বছরের সম্পর্কের পর আলাদা হয়ে যান। তাদের মেয়ে ডেইজি রয়েছে। বিচ্ছেদের পর যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, তাদের সম্পর্কের ধরন বদলাচ্ছে; কিন্তু তারা সবসময় মেয়েকে ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধায় বড় করবেন।
অন্যদিকে জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ারের ১৮ বছরের দাম্পত্যে ইতি পড়ে ২০২৩ সালের আগস্টে। তিন সন্তানের মা–বাবা তারা। বিচ্ছেদের পরও সম্পর্কটি যতটা সম্ভব রেখেছেন।
এরপর কেটি সেই সময় সদ্য সিঙ্গেল। অন্যদিকে ট্রুডোও বয়সি ব্যাচেলর হিসেবে ফিরেছেন এক বছরেরও বেশি সময় হলো। একসময় যা শুধু পরিচয় ছিল, তা ধীরে ধীরে পরিণত হলো ঘনিষ্ঠতায়। আর ট্রুডো হয়তো নিজেই বুঝলেন—ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়েরা সত্যিই ভুলে যাওয়ার মতো নয়। দুজনই এখন তাদের প্রেম লুকোচ্ছেন না।
মন্ট্রিয়লে একান্ত ডিনার—যেখানেই শুরু হলো জল্পনা। সেদিন কেউ-ই নিশ্চিত বলতে পারেননি—রোমান্টিক ডেট, নাকি স্রেফ পুরোনো বন্ধু? তবে দিন যত গড়িয়েছে, উত্তরটা আরও স্পষ্ট হয়েছে—বন্ধুত্ব ছাড়াও অনেক কিছু আছে।
সত্যিকারের দৃশ্যটা ঘটল সেই মুহূর্তে, যখন কেটি গাইছিলেন তার সুপারহিট গান ‘ফায়ারওয়ার্ক’। সামনে দাঁড়িয়ে ট্রুডো যেন চোখের দৃষ্টি সরাতেই পারছিলেন না। বিস্ময়ভরা চোখে গলা মিলিয়ে গান করছিলেন—সেই দৃষ্টিতে ছিল মুগ্ধতা, ছিল ভালোবাসার টুকরো ইশারা। দর্শকদের ক্যামেরা তখন শুধু মঞ্চেই নয়; এক সাবেক প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এক পপ আইকনের দিকে তাকিয়ে থাকেন, সেই গল্পও সেখানে রেকর্ড হচ্ছিল। প্রেমের আতশবাজি যে সত্যিই ফুটতে শুরু করেছে, তা আর গোপন থাকেনি কারও কাছে।
সূত্র: বিলবোর্ড ও টিএমজেড