বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫১ অপরাহ্ন

৬ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলকের পথে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৫ প্রদর্শন করেছেন

বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখে ২০২৫ সালের মধ্যে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করবে৷ বর্তমানে দেশে ২৫৭টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও কার্যকরী ওষুধ কোম্পানি রয়েছে, যাদের উত্পাদিত ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে৷ জাতীয় অর্থনীতিতে এই শিল্পের অবদানও উল্লেখযোগ্য-বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১.৮৩ শতাংশ আসে ফার্মাসিউটিক্যাল খাত থেকে। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই খাতটি এখনও কিছু অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন৷ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের পুঁজিবাজার হতে পারে অন্যতম প্রধান সহায়ক শক্তি। পুঁজিবাজারের মাধ্যমে শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মূলধন সংগ্রহ, গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে অর্থায়ন এবং নতুন উত্পাদন সুবিধা স্থাপন করা সম্ভব হবে।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি (বিএপিআই)-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব কথা উঠে এসেছে।

রাজধানীর গুলশানে বিএপিআই এর অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম এর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। অপরদিকে, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন সমিতির সভাপতি আব্দুল মুক্তাদির।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির প্রেসিডেন্ট ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির স্বাগত জানিয়ে বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেয়ারবাজারকে আরও গতিশীল ও আস্থাশীল করতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের সরবরাহ, নীতিগত স্থিতিশীলতা এবং কর কাঠামোর সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতের ঋণগ্রহণের হার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং টানা তৃতীয় মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী। অথচ, দেশের অর্থনীতির গতি মূলত বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল, যা জাতীয় রাজস্ব ও প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি।
আব্দুল মুক্তাদির আরও বলেন, শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদী আস্থা ফিরিয়ে আনতে নীতি, আইন ও বিধিমালায় ঘন ঘন পরিবর্তন বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত নয়। সরকারের উচিত বিনিয়োগ সম্পর্কিত নীতিমালাগুলো স্থিতিশীল রাখা এবং কোন বিষয়ে পরিবর্তন আনা হবে না তা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা। নীতিগত ধারাবাহিকতা বজায় থাকলেই বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের আস্থা পুনরুদ্ধার সম্ভব।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে পাবলিক ও প্রাইভেট কোম্পানির প্রায় সমান করহার থাকায় তালিকাভুক্তির প্রণোদনা কমে গেছে। পাবলিক কোম্পানিগুলোর জন্য কর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে আরও বেশি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে আসে। একটি কার্যকর ও প্রাণবন্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ মানে হলো সম্পদের তারল্য বৃদ্ধি। বিনিয়োগকারীরা যেকোনো সময় তাদের শেয়ার বিক্রি করে অর্থে রূপান্তর করতে পারেন—যা ব্যাংক আমানতের চেয়ে আরও নমনীয়।

তিনি যোগ করেন, একটি কোম্পানি যখন স্টক মার্কেটে আসে, তখন শেয়ারহোল্ডাররা তাদের সম্পদের অংশে স্বচ্ছতা পান এবং দেশের অন্যান্য মানুষও সেই কোম্পানির বৃদ্ধিতে অংশ নিতে পারেন। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক হওয়া ছাড়াও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশের পুঁজিবাজারকে আরও কার্যকর, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রোথ-ওরিয়েন্টেড করার লক্ষ্যে ডিএসই একটি রূপান্তর যাত্রার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চাই পুঁজিবাজার যেন দেশের অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সরবরাহের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়।
ডিএসই চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, অতীতে নানা অনিয়ম ও অদক্ষতার কারণে পুঁজিবাজার কাঙ্ক্ষিত গতিতে বিকশিত হয়নি। তবে বর্তমানে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা স্বীকার করছেন যে, ব্যাংক নির্ভর অর্থনীতি থেকে ধীরে ধীরে ব্যালান্সড ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেমে রূপান্তর প্রয়োজন।
মমিনুল ইসলাম বলেন, ডিএসই দীর্ঘমেয়াদি মূলধন সরবরাহের ভূমিকা পূর্ণ করতে চায়। এজন্য একটি গ্রোথ-ওরিয়েন্টেড, সার্ভিস-ড্রিভেন ও কাস্টমার-সেন্ট্রিক পুঁজিবাজার গড়ে তোলা অপরিহার্য।
চেয়ারম্যান আরও জানান, আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুততর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলোর আবেদন দুই মাসের মধ্যে প্রক্রিয়াকরণের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি, তথ্যপ্রবাহ ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য ডিএসই একটি সেন্ট্রাল ইনফরমেশন আপলোড সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ডিএসই-তে বর্তমানে ৩৪টি ফার্মাসিউটিক্যালস ও কেমিক্যাল কোম্পানি তালিকাভুক্ত, যার মধ্যে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস বাজারমূল্যের দিক থেকে শীর্ষ কোম্পানি। দেশের ওষুধ শিল্প প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের বাজারে পরিণত হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে ৯৮ শতাংশ ওষুধ উত্পাদিত হচ্ছে। ডিএসই চায়, এই শিল্প আরও শক্তিশালী হোক এবং নতুন প্রতিষ্ঠান লিস্টিংয়ের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করুক, যাতে ব্যাংক নির্ভরতা কমে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।
মমিনুল ইসলাম সভায় বলেন, মূল বোর্ড ছাড়াও SME এবং Alternative Trading Board (ATB) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন আকারের প্রতিষ্ঠান দ্রুত ও সহজে লিস্টিং করতে পারবে। বিশেষ করে ATB ক্ষুদ্র ও উদীয়মান উদ্যোক্তাদের জন্য উপযোগী।
তিনি যোগ করেন, আমরা আত্মবিশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি-ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ একটি স্বচ্ছ, দক্ষ এবং প্রাণবন্ত পুঁজিবাজার গড়ে তুলবে, যা দেশের অর্থনীতি ও শিল্পখাতের টেকসই প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ডেল্টা ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সেক্রেটারী জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, দেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স ও পাবলিক লিস্টিংয়ের পূর্ণ সুবিধা নিতে পারছে না। তিনি বলেন, বিদেশে পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায়, কিন্তু বাংলাদেশে সে মাত্রা এখনো কম।
তিনি আরও জানান, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স, যা দেশের আইনগত স্বীকৃতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা দেয়। পাবলিক লিমিটেড হওয়ায় কর সুবিধার পাশাপাশি নন-ফাইনান্সিয়াল সুবিধা যেমন: বিভিন্ন সরকারি সম্মাননা, ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড, সিআইপি এবং ভিআইপি সুবিধা এবং ব্যবসায়িক ও সামাজিক মর্যাদা প্রদান করে। এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের পাবলিক পারসেপশন পরিবর্তনে সহায়তা করবে এবং বিভিন্ন শিল্প খাত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উত্‌সাহিত হবে।
ড. জাকির হোসেন মনে করেন, ডিএসই’র এই উদ্যোগ শিল্প খাতের উদ্ভাবন, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।
ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুর রহমান এফসিএস জানান, ডিএসই বর্তমানে তিনটি প্ল্যাটফর্মে লিস্টিং সুবিধা দিচ্ছে-মূল বোর্ড, এসএমই বোর্ড ও অলটারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (ATB)।
তিনি বলেন, এসএমই বোর্ড স্বল্প মূলধনী (৫ কোটি টাকা পেইড-আপ ক্যাপিটাল) প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য, যা মূল বাজারে প্রবেশের প্রস্তুতিমূলক ধাপ হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে, ATB অপেক্ষাকৃত সহজ ও নমনীয়, যেখানে নির্দিষ্ট মূলধনের বাধ্যবাধকতা নেই এবং মাত্র ১০০০০ টাকায় লিস্টিং করা যায় এবং ইলেক্ট্রনিক্যালী শেয়ার হস্তান্তর করা যায়।
আসাদুর রহমান জানান, ডিএসই এখন কাস্টমার-সেন্ট্রিক ও সার্ভিস-অরিয়েন্টেড প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। আইপিও প্রস্তুতি ও লিস্টিং সহায়তায় ডিএসই ভবনে বিশেষায়িত কর্নার চালু হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন শিল্পখাত ও ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের মাধ্যমে বাজারকে আরও শক্তিশালী করার কাজ চলছে।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে, তবুও অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। যদি এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো মেইন বোর্ড, এসএমই বোর্ড বা এটিবি-তে আসে, তবে তাদের প্রবৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও টেকসই উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।
তিনি আরো বলেন, ডিএসই ও বিএসইসি এখন যৌথভাবে বাজারকে আরও স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব করতে কাজ করছে, এবং নিম্নমানের আইপিও অনুমোদন না দেওয়া সুশাসনের প্রতিফলন। আধুনিক অবকাঠামো ও দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে ডিএসই এখন একটি সার্ভিস-অরিয়েন্টেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেটার মার্কেট ফর বেটার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে।
ইমন বলেন, ভালো উদ্যোক্তারা যদি বাজারে না আসে, তবে দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ নেবে। এখন সময় এসেছে সৎ ও সক্ষম উদ্যোক্তাদের এগিয়ে এসে ইতিবাচক পরিবর্তনের অংশীদার হওয়ার।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অব) বলেন, বিশ্বের বড় সব ওষুধ কোম্পানি নিজ নিজ দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। তালিকাভুক্তি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আস্থার প্রতীক। বাংলাদেশেও এখন সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে। ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হলে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো জনগণের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ভ্যালু ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবে।
তিনি বলেন, আমরা ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের প্রবৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব; আর উদ্যোক্তারা জাতির স্বাস্থ্য ও মানবিক উন্নয়নে অবদান রাখবেন—এই সমন্বয়ই দেশের সার্বিক উন্নয়নের মূলভিত্তি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রিচাড ডি রোজারিও বলেন, কোনো কোম্পানি তার অর্জিত মুনাফাকে কতটা সঠিকভাবে কাজে লাগাচ্ছে—সেটিই প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত টেকসইতা নির্ধারণ করে।
তিনি আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে আপনারা যে ভূমিকা রাখছেন, পুঁজিবাজারে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর বড় কোম্পানি স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য সর্বদা চেষ্টা করে। তিনি বলেন, ডিএসইও কাঠামোগত পরিবর্তনের পথে রয়েছে। আগস্টের পর চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা থেমে থাকিনি। আজকের বৈঠক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা পেয়েছি। তিনি বলেন, সবকিছু রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে যত বেশি মানুষ স্টক মার্কেটে যুক্ত হবেন এবং যত বেশি বড় কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে পরিবর্তন তত দ্রুত হবে।
রেনাটা পিএলসি’র সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এস কায়সার কবির বলেন, লিস্টিংয়ের মূল সুবিধা হলো আন্তর্জাতিক বাজারে কোম্পানির স্বীকৃতি বৃদ্ধি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে একটি কমফর্ট জোন হিসেবে দেখে, যা তাদেরকে নির্ভরযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা বোঝার সুযোগ দেয়।
তিনি আরও বলেন, লিস্টেড কোম্পানির তথ্য যেমন মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন এবং অন্যান্য ফিনান্সিয়াল ডেটা সহজলভ্য হওয়ায় আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের কোম্পানির স্থিতি এবং সম্ভাবনা দ্রুত বুঝতে পারে। এই স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ স্টক মার্কেটকে আরও শক্তিশালী করে।
কিছু চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে। এরমধ্যে ডিভিডেন্ড নীতি ও শেয়ারহোল্ডারের স্বার্থের ভারসাম্য রক্ষা করা প্রয়োজন। লিস্টেড কোম্পানিগুলোকে এমনভাবে পরিচালনা করা উচিত যাতে সকল শেয়ারহোল্ডার উপকৃত হন।
বাংলাদেশ ল্যাম্পস পিএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সিমিন রহমান বলেন, উচ্চ সুদের হার ও মুদ্রার অবমূল্যায়নে ব্যবসায়ীরা কঠিন চাপে আছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন রাইট ইস্যু বা বড় উদ্যোগ নেওয়া উপযুক্ত নয়; তবে ভবিষ্যতে অবস্থা অনুকূল হলে তা পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।
তিনি জানান, ফ্রাঙ্কফুর্ট সফরে ভারত ও ইউরোপের অনেক প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হওয়াকে সাফল্যের প্রতীক হিসেবে দেখছে। তারা গর্বের সঙ্গে বলছে—আমরা খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারে যাচ্ছি।
সিমিন রহমান দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশে এখনো তালিকাভুক্ত হওয়াকে সে গুরুত্বে দেখা হয় না, যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এটি একটি বড় অর্জন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, বর্তমানে বাজারব্যবস্থায় যে ইতিবাচক পরিবর্তন ও ভোক্তাকেন্দ্রিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তা ভবিষ্যতে বাজারকে আরও প্রাণবন্ত ও অংশগ্রহণমূলক করে তুলবে।
বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাস্টুরেরস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফার্মাসিউটিক্যালের বাইরেও দেশের বেশ কয়েকটি নন-লিস্টেড সেক্টরে বিনিয়োগের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে । আমাদের এগ্রোকেমিক্যাল সেক্টর সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসেছে। আগে নানা ধরনের ট্যারিফ ও নীতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক পণ্য স্থানীয়ভাবে উত্পাদন করা সম্ভব ছিল না। বর্তমানে সেই বাধাগুলো ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে, ফলে এ খাতে বিনিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই সেক্টরে ইতোমধ্যে এসিআই, ন্যাশনাল এগ্রিয়ার, স্কয়ার ফার্মা’র মতো শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো কাজ করছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগে আগ্রহী।
নন-লিস্টেড কোম্পানিগুলোর সম্ভাবনা নিয়ে তিনি বলেন, যদি পুঁজিবাজারের মার্কেটিং বিভাগ এগ্রোকেমিক্যাল শিল্পের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে, তবে নন-লিস্টেড অনেক প্রতিষ্ঠান—এসএমই ও বড় উভয় খাতের—পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহ দেখাবে।
হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোক্তারা মার্কেটে প্রবেশের আগে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছেন। বড় কোম্পানিগুলোর এক্সপ্যানশনের জন্য উল্লেখযোগ্য ফান্ডের প্রয়োজন হবে, যা ব্যাংকের পরিবর্তে ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে সংগ্রহ করলে ব্যয় ও ঝুঁকি কমবে এবং প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
তিনি বলেন, সঠিক সময় মনে হলে আমরা মার্কেটে প্রবেশ করব, যা কোম্পানি ও দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।
হালিমুজ্জামান আরও উল্লেখ করেন, ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাপিটাল মার্কেটকে দীর্ঘমেয়াদি ফান্ডিং সোর্স হিসেবে দেখতে আগ্রহী, তবে এজন্য রেগুলেটরি সহায়তা ও বাজারবান্ধব নীতির প্রয়োজন।
পরিশেষে ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পরিবর্তন আমাদের সকলের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আসতে হবে। সরকারের নীতি ও নিয়মের কারণে ক্যাপিটাল মার্কেটে আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। কিন্তু একসাথে কাজ করলে আমাদের দাবি ও প্রস্তাব আরও কার্যকরভাবে সরকারের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। একসাথে কাজ করে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা, আস্থা ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ