ভারতের দরিদ্রতম রাজ্য বিহারে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রায় ১৩ কোটি মানুষের এ রাজ্যে একটি বিষয় অন্য সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে—অর্থ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে কাজে লাগাতে চায়—ভোটারদের আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে পুরোপুরি ক্ষমতা দখলের আশায়।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এএফপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিহারে জয় বিজেপিকে আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যেও ‘নতুন উদ্দীপনা’ দিতে পারে।
হিন্দু-অধ্যুষিত বিহার ভারতের তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য—প্রায় মেক্সিকোর সমান। হিন্দি ভাষাভাষী উত্তর ভারতের এটিই একমাত্র রাজ্য, যেখানে মোদির হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি কখনও এককভাবে ক্ষমতায় আসেনি।
মোদির জন্য যা চ্যালেঞ্জ
মুজাফফরপুর জেলার গৃহবধূ রাজকুমারি দেবীর সংসার চলে তার দিনমজুর স্বামীর আয়ে। কাজ পেলে তিনি দিনে ৪০০–৫০০ রুপি (প্রায় ৫ ডলার) আয় করেন।
‘কোনো স্থায়িত্ব নেই,’ ২৮ বছর বয়সি রাজকুমারি বলেন, তাদের ছোট এক কক্ষের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে। ‘অনেক সময় কাজও থাকে না, তখন যা আছে তাই টেনে ব্যবহার করতে হয়। সর্বত্রই বেকারত্ব।’
সরকারি নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান নীতি আয়োগের হিসাব অনুযায়ী, দারিদ্র্যের সূচকে বিহার ভারতের মধ্যে সবচেয়ে নিচে। রাজ্যের মাথাপিছু জিডিপি ৫২,৩৭৯ রুপি—যা মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোর সমান।
অর্থের প্রতিশ্রুতি
তবে গত এক দশকে রাজ্যটিতে কিছু উন্নতি হয়েছে। নীতিআয়োগের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনমানের ঘাটতির ভিত্তিতে নির্ধারিত ‘বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে’ বসবাসকারী মানুষের হার ২০১৬ সালে ছিল অর্ধেকের বেশি, যা ২০২১ সালে নেমে আসে প্রায় এক-তৃতীয়াংশে।
গত সেপ্টেম্বরে মোদি ৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিনিয়োগ প্রকল্প ঘোষণা করেন, যার মধ্যে ছিল রেল ও সড়ক উন্নয়ন, নতুন কৃষি প্রকল্প এবং একটি বিমানবন্দর টার্মিনাল নির্মাণ।
তিনি নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৮৪৪ মিলিয়ন ডলারের একটি কর্মসূচিও চালু করেন, যার আওতায় ৭৫ লাখ নারীকে ১০ হাজার রুপি করে নগদ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজেপি বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর সঙ্গে ক্ষমতায় থাকা জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটে (এনডিএ) রয়েছে। তবে দলটি কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছে।
রোববার পাটনার এক জনসভায় মোদি ভোটারদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, ‘এনডিএকে আশীর্বাদ দিন।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিহারে বিজেপির জয় প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গ বা দক্ষিণের তামিলনাড়ুর মতো বিরোধীদলীয় রাজ্যগুলোতেও দলের গতি বাড়াতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক পুষ্পেন্দ্র (যিনি এক নামেই পরিচিত) বলেন, ‘এই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করবে, বিজেপি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে কি না।’
তার মতে, এক্ষেত্রে বিজেপির জয় দেশজুড়ে দলটিকে ‘উদ্দীপিত’ করবে।
দুই দফায় এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৬ ও ১১ নভেম্বর। ফল ঘোষণা হবে ১৪ নভেম্বর।
‘বেকার মানুষদের রাজ্য’
বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলো রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট।
গত সপ্তাহে আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব দারভাঙ্গা জেলায় এক জনসভায় বলেন, ‘নতুন বিহার গড়ার সময় এসেছে।’ তিনি প্রতিটি পরিবারে একজন করে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন।
একই সঙ্গে বিজেপির সাবেক নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরও ‘জন সুরাজ’ (জনগণের সুশাসন) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। সমর্থকরা তাকে গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে রাস্তায় অভ্যর্থনা জানায়।
‘পড়ার পরই মানুষ দৌড়াতে বা হাঁটতে শেখে,’ বলেন ২৫ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ও কিশোর সমর্থক মুদাসির। ‘এইবার বড় জয় না পেলেও সমস্যা নেই।’
বিশ্লেষক পুষ্পেন্দ্র বলেন, ভোটের ফল নির্ভর করবে ভোটাররা কোন দলকে নিজেদের ভবিষ্যতের ভরসা মনে করেন তার ওপর। ‘এখন ‘‘বিহারির’’ মানে দাঁড়িয়েছে ‘‘বেকার মানুষ’’।’
৩০ বছর বয়সি শ্রমিক বিকাশ কুমার এক দশক আগে কাজের খোঁজে রাজ্য ছেড়েছিলেন, কিন্তু এখনও স্থায়ী আয় জোটাতে পারেননি।
‘এখানে যদি শিল্প-কারখানা স্থাপন করা যেত, তাহলে মানুষ না খেয়ে মরত না,’ তিনি বলেন। ‘তারা ঘরে বসেই আয় করতে পারত, ভালোভাবে বাঁচত, নিয়মিত খাবার জুটত।’