তিন বছর আগে হাবিগঞ্জের বিচারিক আদালত থেকে খালাস পাওয়া ধর্ষণের আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। দণ্ডিত কাছুম আলী হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের টিলাগাও গ্রামের ছিদ্দিক আলী ছেলে। বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন। রায় বাতিল করা নিয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে এ রায় দেওয়া হয়েছে। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আক্তারুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শরীফুজ্জামান মজুমদার।
আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ২৮ ধারা অনুসারে ট্রাইব্যুনাল অর্থাৎ বিচারিক আদালতের রায়ের ৬০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। আপিল করতে হয় রাষ্ট্রপক্ষকে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল না করায় ২০২১ সালে বাদী হাইকোর্টে এসে রায় বাতিলের আবেদন করেন। ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৬১ ধারা অনুসারে এ আবেদন করা হয়। আবেদনে বলা হয়, আইনের অপপ্রয়োগ করে বিচারিক আদালত আসামিকে খালাসের রায় দিয়েছেন। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ারে পরও তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। সে আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট রায় বাতিল প্রশ্নে রুল দিয়েছিলেন। সে রুলটিই যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়েছে।’ এ আইনজীবী বলেন, ‘বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে আসামি কাছুম আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এক লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আসামিকে আরও ছয়মাস কারা কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।’
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী ছিলেন আসামি কাছুম আলী। তার বাবা ছিদ্দিক আলী সৌদি আরবে থাকতেন। কাছুম আলী বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে। বিয়ের নিশ্চয়তা দেওয়ায় ২০০৬ সালের ২ জুলাই কছুর আলীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান ভুক্তভোগী। এর কিছুদিন পর এরপর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরেন ভুক্তভোগী। এরপর স্থানীয় একটি ডাগায়নস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিতও হন ভুক্তভোগী। বিষয়টি কাছুম আলীকে জানিয়ে বিয়ে করার কথা বললে কাছুম আলী ওষুধ খেয়ে গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট করতে বলে। এতে রাজি না হওয়ায় এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করে কাছুম আলী। এরপর ২২ জুলাই হবিগঞ্জের আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০০ এর ৯ (১) ধারায় মামলা করেন ভুক্তভোগী। মামলার বিচার চলার সময় ভুক্তভোগী সন্তানের জন্ম দেন। এর মধ্যে ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে আপসের প্রস্তাব দেয়ে কাছুম আলীর পরিবার। আপসের শর্তে ভুক্তভোগীর মা-বাবাসহ চারজন সাক্ষী দুর্বল সাক্ষ্য দেন। বিচার শেষে হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২০২১ সালে রায় দেন। রায়ে আসামি কাছুম আলীকে খালাস দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল না করায় বাদী হাইকোর্টে এসে রায় বাতিলের আবেদন করেন। ২০২১ সালের ৩০ মে রুল জারি করে বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলার নথি তলব করেছিলেন। নথি আসার পর রুলে চূড়ান্ত শুনানির পর রায় দিলেন উচ্চ আদালত।