মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ কোনো শিক্ষার্থী নিহত হয়নি, অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৩৪ প্রদর্শন করেছেন

সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষে কেউ নিহত হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। অপপ্রচার থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।  সোমবার সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ১৬ নভেম্বর ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরে গত ১৮ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। ওইদিন রাতে তার পরিবার ও কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়। ২০ নভেম্বর পুনরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ৫০০/৬০০ শিক্ষার্থী ওই হাসপাতালে এসে ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় প্রতিবাদকারীদের চাপে হাসপাতালের পরিচালক ৪ জন ডাক্তার ও ২ জন শিক্ষার্থীসহ অভিজিতের চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কিন্তু ওই সময় হাসপাতাল চত্বরে অবস্থানরত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে। সন্ধ্যার পর স্থানীয় শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে আসে। এ সময় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা সমঝোতা না মানায় উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই ছাত্র আহত হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

তিনি আরও জানান, গতকাল ২৪ নভেম্বর আনুমানিক দুপুর ২টার দিকে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পুনরায় ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে তারা শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ (২৫ নভেম্বর) শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী জমায়েত হয়ে আনুমানিক সকাল ১১টার সময় ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। আগে থেকে পুলিশ ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে অবস্থান করে। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখী শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা প্রতিহত করে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়। পরে যাত্রাবাড়ী মোড়ে পুলিশ পুনরায় বাধা প্রদান করলেও তারা বাধা অতিক্রম করে ওই কলেজে পৌঁছে ব্যাপক ভাঙচুর-লুটপাট চালায়।

ডিএমপির মুখপাত্র বলেন, ৩৫টি বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ইউনাইটেড কলেজ অব বাংলাদেশ (ইউসিবি) নামে একটি ফোরাম গঠিত হয়। অপরপক্ষে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজ মিলে সাত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি জোট রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎয়ের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ৩৫ কলেজের ফোরাম ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পরস্পরের প্রতি ঘৃণার মনোভাব সৃষ্টি হয়।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আজ সকাল ৭টা থেকে সূত্রাপুর ও ডেমরা এলাকায় পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করা হয়। মোতায়েন করা পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু উচ্ছৃঙ্খল ও মারমুখী শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের দিকে অগ্রসর হয়ে ওই কলেজে হামলা চালায়। পুলিশ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য অতিরিক্ত বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে। পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তা সত্ত্বেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং হামলা ও লুটতরাজে জড়িয়ে পড়ে।

ডিএমপির মুখপাত্র আরও বলেন, সরকারি শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ এবং ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের জেরে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লিখিত ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন মর্মে অনেকেই অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা মোটেই সঠিক নয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ