মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন মালয়েশিয়া সফর বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভে অংশ নেয় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। তারা ‘অপজ ট্রাম্প সেক্রেটারিয়েট’ নামের প্রো–প্যালেস্টাইন ছাত্রজোটের ব্যানারে একত্রিত হয়।
বিক্ষোভকারীরা ড্রাম বাজিয়ে ও স্লোগান দিতে দিতে ট্রাম্প ও ইসরাইলবিরোধী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের হাতে থাকা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— ‘ডাম্প ট্রাম্প’, ‘নো ওয়েলকাম ফর ওয়ার ক্রিমিনালস’ এবং ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’।
পরে বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রবেশ করে প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করে। স্মারকলিপিতে তারা ট্রাম্পের আমন্ত্রণ বাতিল, ইসরাইল–সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ থেকে সরকারকে বিচ্ছিন্ন করা এবং ফিলিস্তিনের প্রতি মালয়েশিয়ার ঐতিহ্যগত সমর্থন পুনর্ব্যক্তের আহ্বান জানান।
বিক্ষোভের আয়োজকরা জানান, তারা আগামী দিনগুলোতে আরও কর্মসূচি পালন করবেন। এর মধ্যে রয়েছে গাড়িবহর শোভাযাত্রা, ফ্ল্যাশ মব এবং ২৬ অক্টোবর আমপাং পার্ক এলাকায় ‘ডাম্প ট্রাম্প’ নামে এক বৃহৎ সমাবেশ, যেদিন ট্রাম্পের মালয়েশিয়া সফরের কথা রয়েছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ট্রাম্পের সফর বাতিলের দাবি জোরালো হচ্ছে। মালয়েশিয়া বর্তমানে আসিয়ানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে এ অঞ্চলের সংলাপ অংশীদার হিসেবে গুরুত্ব দেওয়ার যুক্তি দেখিয়ে ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে সরকারি ব্যাখ্যা দেওয়া হলেও, বিষয়টি নিয়ে ধর্মীয় ও বুদ্ধিজীবী মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি ফেডারেল টেরিটোরিজের মুফতি আহমাদ ফাউয়াজ ফাদজিল ট্রাম্পবিরোধী আন্দোলনকে ‘অতি আবেগপ্রবণ ও উগ্র মনোভাবের প্রকাশ’ বলে মন্তব্য করলে মুসলিম সমাজ ও প্রো–প্যালেস্টাইন সংগঠনগুলোর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ইসলামিক রেনেসাঁ ফ্রন্টের (আইআরএফ) পরিচালক ড. আহমাদ ফারুক মুসা ওই মন্তব্যের কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি গণহত্যার মূল পৃষ্ঠপোষককে স্বাগত জানানোই প্যালেস্টাইন ইস্যুর প্রতি সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা।
বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদ চন্দ্র মুজাফফরও প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভদ্র ও মর্যাদাপূর্ণ ভাষায় ট্রাম্পের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চলমান গণহত্যায় ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এমন এক ব্যক্তিকে স্বাগত জানানো মালয়েশিয়ার জনগণের কাছে ঘৃণার কারণ হবে।
এদিকে মালায়ায় বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএম) একটি প্রো–প্যালেস্টাইন বিক্ষোভ প্রশাসনের বাধার মুখে পড়ায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়েছে। গত বছর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এক প্রো–জায়নিস্ট বক্তাকে আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনায়ও কর্তৃপক্ষ সমালোচিত হয়েছিল।
সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সফর ঘিরে মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গন ও জনমনে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।