মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৮ অপরাহ্ন

ছাত্র আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরের গুলিবিদ্ধ সুজনের অর্থ সংকটে চিকিৎসা বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৩৭ প্রদর্শন করেছেন

 

সারাদেশের ন্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে লক্ষ্মীপুর শহরে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন কলেজছাত্র খালেদ মাহমুদ সুজন (১৭)। তার ঘাড়-গলা, ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এখনও ৮টি গুলি (বুলেট) রয়েছে। তবে চরম অর্থ সংকটে চিকিৎসাহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। অসহায় পরিবারের পক্ষে যেখানে দেশেই চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়, সেখানে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা করা তো অকল্পনীয়।  তবে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা শরীর থেকে গুলিগুলো বের করা হলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে বলে জানান চিকিৎসকরা।

সুজন সদর উপজেলার চররুহিতা এলাকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শাহীন কাদিরের ছেলে। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসিতে অধ্যায়নরত। সুজনের ছোট ভাই সোহান হোসেন ও শিহাব হোসেন। এরমধ্যে সোহানও বাবার মতো বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। শিহাব অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। নিজের পড়ালেখা আর পরিবারের সদস্যদের খরচ জোগাতে সুজন একটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। অসুস্থ্য হওয়ায় এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, ৪ আগস্ট শহরের মাদাম ব্রিজ ও তমিজ মার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকারীদের ওপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও গুলি চালায়। একপর্যায়ে সহযোগীদের নিয়ে নিজের বাসভবনের ছাদ থেকে প্রকাশ্যে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলোচিত তাহেরপুত্র একেএম সালাউদ্দিন টিপুর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে খালেদ মাহমুদ সুজনসহ শতাধিক আহত ও গুলিবিদ্ধ হন। মারা যান ৪ ছাত্র।

গুলিবিদ্ধ সুজনকে প্রথমে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছিল। এ সময় অপারেশনের মাধ্যমে দুইটি গুলি বের করা হয়। তবে এখনো ঘাড়-গলা ও ফুসফুসসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ৮টি গুলি রয়েছে।

সুজনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এখন সুজন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। অন্যের সাহায্য নিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়। সুজন তাদের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। এখন সামনের দিনগুলো কীভাবে যাবে তা নিয়ে চিন্তিত তারা।

খালেদ মাহমুদ সুজন জানান, শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনের সকল কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। ৪ আগস্ট দুপুরে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে তাদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালানো হয়। এতে তার শরীরে ১০টি বুলেট বিদ্ধ হয়। অপারেশন করে দুইটি বের করলেও ৮টি গুলি এখনো শরীরে রয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এখনও সরকারিভাবে সহায়তা পাননি। তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সকলের সহযোগিতা চান।

লক্ষ্মীপুরের ছাত্র সমন্বয়ক বায়োজীদ হোসাইন বলেন, আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি করছি। যাদের চিকিৎসা প্রয়োজন, সরকারকেই তা নিশ্চিত করতে হবে।

উত্তর হামছাদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, গুলিবিদ্ধ সুজনের বাড়িতে গিয়ে আমি দেখে এসেছি। পরিবারটি অসহায়। আমার পরিবারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছি।

সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক জয়নাল আবেদিন জানান, প্রতিটি গুলি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এর কারণে শরীরে ইনফেকশন দেখা দিলে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। দেশে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাজীব কুমার সরকার জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের তালিকা হয়েছে। তাদের পরিবারের পাশে আমরা আছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ