নরওয়ের রাজধানী অসলোতে নোবেল কমিটি শুক্রবার সকাল ১১টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) শান্তি পুরস্কারের বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে, যা নিয়ে চলছে ব্যাপক আগ্রহ ও জল্পনা।
তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট এবার বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক সংঘাত তথ্যভান্ডার অনুযায়ী, ১৯৪৬ সালের পর ২০২৪ সালেই বিশ্বের সর্বাধিক সংখ্যক রাষ্ট্রসম্পৃক্ত সশস্ত্র সংঘাত সংঘটিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, তিনি ‘আটটি সংঘাতের সমাধান’ করেছেন—এই কারণে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তত এ বছর কমিটির পছন্দ তিনি নন।
‘না, এ বছর ট্রাম্প নন,’ বলেন সুইডেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টিন। ‘সম্ভবত আগামী বছর দেখা যেতে পারে—তত দিনে তার বিভিন্ন উদ্যোগ, বিশেষ করে গাজা সংকটের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।’
অনেক বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের ‘শান্তির দূত’ হওয়ার দাবিকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন। তাদের মতে, তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নোবেল পুরস্কারের মূল চেতনা—আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জাতিগোষ্ঠীর ভ্রাতৃত্ব এবং নিরস্ত্রীকরণ—এর পরিপন্থি।
ওসলো শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন, ‘ট্রাম্পের কিছু পদক্ষেপ স্পষ্টভাবেই নোবেলের আদর্শবিরোধী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বহু-পাক্ষিক চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছেন, মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের সঙ্গেই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি দিয়েছেন, দেশজুড়ে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছেন।’
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়রগেন ওয়াটনে ফ্রিডনেস বলেন, ‘আমরা প্রার্থীর সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করি। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই তিনি বাস্তবে শান্তির জন্য কী অর্জন করেছেন।’
কাদের নাম এগিয়ে আছে?
এ বছর শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন মোট ৩৩৮ জন ব্যক্তি ও সংগঠন। এই তালিকা ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হয়। প্রস্তাব দেওয়ার অধিকার থাকে বিশ্বের সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, পূর্ববর্তী বিজয়ী, নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কমিটির সদস্যদের হাতে।
২০২৪ সালে পুরস্কার পেয়েছিল জাপানের পারমাণবিক বোমা হামলার বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সংগঠন ‘নিহোন হিদানকিয়ো’, যারা বিশ্বব্যাপী পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
এ বছর কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীকে স্পষ্টভাবে এগিয়ে মনে করা না হলেও কয়েকটি নাম বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে—যেমন সুদানের ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’, যারা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের মধ্যে নিজের জীবন বাজি রেখে ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষকে সাহায্য করছে; রাশিয়ার প্রয়াত বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনয়া; এবং ইউরোপীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও মানবাধিকার কার্যালয় (ওডিআইএইচআর)’।
নরওয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক হালভার্ড লেইরা বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নোবেল কমিটি বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের চেয়ে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নারীর অধিকার—এই ধরনের ক্লাসিক শান্তির ধারণার দিকে ফিরে এসেছে।’
তার মতে, ‘আমার ধারণা, এ বছর সম্ভবত কোনো বিতর্কহীন ও তুলনামূলকভাবে নিরপেক্ষ প্রার্থীই পুরস্কার পাবেন।’
এ বছর নোবেল কমিটি চাইলে বৈশ্বিক সংহতির বার্তা দিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে, অথবা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) কিংবা ফিলিস্তিনি শরণার্থী ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-কে পুরস্কার দিতে পারে।
তাছাড়া আন্তর্জাতিক আদালত (আন্তর্জাতিক বিচার আদালত) বা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, কিংবা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য কাজ করা সংগঠন যেমন ‘সংবাদকর্মী সুরক্ষা কমিটি’ বা ‘সীমান্তহীন সাংবাদিকরা’-কেও পুরস্কারের জন্য বিবেচনা করা হতে পারে।
তবে ইতিহাস বলছে, নোবেল কমিটি বহুবার সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে সবাইকে চমকে দিয়েছে।
সুতরাং শুক্রবারের ঘোষণার আগে পর্যন্ত প্রশ্নটা রয়ে যাচ্ছে—কে পাচ্ছেন ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার?