সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৩ অপরাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে টিসিবির পণ্য প্যাকেটজাতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ সরকারি কর্মচারির বিরুদ্ধে

অভিশেখ চন্দ্র রায় (ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি)
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ৯ মার্চ, ২০২৪
  • ১৩১ প্রদর্শন করেছেন

টিসিবির পণ্য প্যাকেটজাত করণে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে গেল বুধবার (৬ মার্চ) অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সোলেমান আলীর বরাবরে অভিযোগ করেন ডিলাররা। অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে হাইকোর্টে একটি মামলাও চলমান রয়েছে।

ডিলারদের এমন অভিযোগের বিষয়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় একষট্টি জন ডিলারের মাধ্যমে বিরানব্বই হাজার ছয়শত আটাশি জন স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে কম দামে টিসিবি পণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল ও তেল বিক্রি শুরু করছে।

তবে টিসিবি পণ্য প্যাকেটজাত করণে এক টাকা ও শ্রমিক মুজরী এক টাকা করে ডিলারদের কাছে আদায় করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম ও মিন্টূ।

ফলে প্রতি বার ডিলারদের কাছ থেকে শুধু প্যাকেজিং বাবদ ৯২,৬,৮৮ টাকা করে। এভাবে গেল সাত মাসে আদায় করা হয়েছে ছয় লাখ আটচল্লিশ হাজার আটশত ষোল টাকা। আর শ্রমিকদের খরচেও নেয়া হয়েছে এক টাকা করে। সবমিলে ডিলারদের কাছ থেকে আদায় করা হয় প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা।

অথচ প্যাকেজিং ও আনলোডিং বাবদ ৩,৯৭,৩৩২ টাকা খরচ হয়েছে বলে টিসিবির ক্যাম্প অফিস দিনাজপুরে পত্র পাঠান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সোলেমান আলী।

পরবর্তীতে ভ্যাট ও আয়কর কর্তন করে প্যাকেট প্রতি ২ টাকা ৬১ পয়সা হারে ২,৪১,৯১৬ টাকার একটি চেক প্রদান করেন টিসিবি ক্যাম্প অফিসের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান।

তাহলে প্রশ্ন ওঠে ডিলারদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় করা হয়েছে সেগুলো গেলো কথায়?

অনুসন্ধানের সময় ডিলাররা অভিযোগ করে বলেন, অফিস সহকারী শহিদুল প্যাকেটজাত ও শ্রমিক খরচের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সাত মাসে শহিদুল ও মিন্টু প্রায় ১০ লাখ টাকা আদায় ডিলারের কাছ থেকে। বিষয়টি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কে টাকা নেয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছি। তিনি টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান তারা।

মেসার্স স্বর্গ সমুদ্র টের্ডাসের সুব্রত সরকার, মেসার্স শিফা ট্রেডার্স’র সাইফুল ইসলাম, মেসার্স বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ’র আনোয়ার হোসেন ও মেসার্স সাহেদী মুদি স্টোর’র রোকনুজ্জামান সাহেদী জানান, শহিদুলের নির্দেশে মিন্টু শ্রমিক খরচ এক টাকা ও প্যাকেতজাত করণে এক টাকা করে নিয়েছে। টাকা দিতে না চাইলে তারা চাপ দিতো। আটকে দেয়া হতো গাড়ি। পরবর্তিতে টাকা ফেরত চেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করেন ডিলাররা।

তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি শুরুতে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে বলেন টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জেলা প্রশাসক অবগত রয়েছেন। তবে সাত মাস নয় কয়েক মাস দায়িত্বে ছিলেন। আর একা এই কাজটি করেননি বলে দাবি তার।

আর এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ সোলেমান আলী জানান, টিসিবি পন্য প্যাকেটজাতে টাকা নেওয়ার কথা জানা ছিল না। অফিসের কর্মচারির বিরুদ্ধে টাকা নেয়ার বিষয়টি জানিয়েছে ডিলাররা। লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে, শহিদুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আয়ের অভিযোগ উঠেছিলো। যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। তিনি গ্রামের সহজ সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে জমি ক্রয় করেন। এরপর সেই জমি সরকারি প্রকল্পে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেন। এভাবে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। হঠাৎ করেই এত সম্পদের মালিক হওয়ায় শহরজুড়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।

ডিসি অফিসে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী এখন ঠাকুরগাঁও শহরের বড় মাঠের পাশে নির্মাণ করছেন ছয় তলাবিশিষ্ট আলিশান বাড়ি। বাড়িটিতে রয়েছে লিফটের ব্যবস্থাও। তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকে একটি মামলা চলমান রয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ