সোনালি দিনে ফিরে গেলেন হাসান
অনলাইন ডেস্ক
-
প্রকাশের সময়ঃ
মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪
-
৩৮
প্রদর্শন করেছেন
হাসানুল হকের বড় ছেলের বিয়েতে রীতিমতো মেলা বসেছিল তারকাদের। সত্তর-আশির দশকের ফুটবল প্রজন্ম যেন আবার এক হয়েছিল। শেখ মোহাম্মদ আসলাম, রোম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির, কায়সার হামিদদের ভিড়ে হাসান নিজেই যেন হারিয়ে যান! ১৯৭৯ সালে বিজেআইসির চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড় ছিলেন, তবে আবাহনী-মোহামেডানে জার্সি গায়ে না চড়ালে সেই আমলে তারকাখ্যাতি মিলত না। বাংলাদেশ দলের জার্সিতে ক্যারিয়ারটা সংক্ষিপ্ত হলেও স্মরণীয় বিশেষ একটি কারণে। তবু ফুটবলীয় আলোচনায় হাসান বিস্মৃত একটি নাম। এ নিয়ে কিছুটা মনঃকষ্ট, অভিমান আছে হাসানুল হকের, “জানেন, আমার ছেলেরাই বলে, ‘তোমার মুখেই শুধু শুনি, তুমি এটা করেছ, সেটা করেছ। কিন্তু আর কোথাও তো নাম শুনি না। মিডিয়াও কিছু বলে না!’” অথচ ১৯৭৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত যুব এশিয়া কাপে ইয়েমেনের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে হোটেল পূর্বাণীতে যখন ফিরছিলেন হাসান, সংবাদকর্মীদের দল ঘিরে ধরেছিল তাঁকে। তাঁর একমাত্র গোলেই যে অত বড় আসরে ইয়েমেনকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। স্টেডিয়ামে আনন্দের ঢেউ খেলেছিল সেদিন। মনে আছে, “সেদিন সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বলেছিলাম, ‘সারা দেশের মানুষকে যে আজ আমি আনন্দ দিতে পেরেছি, এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।’” সেই গোল, জয়ের মাহাত্ম্য অনেক। ইয়েমেনের বিপক্ষে ওই জয়ের আগে বাংলাদেশের সিনিয়র জাতীয় দলও কোনো আন্তর্জাতিক আসরে জয়ের মুখ দেখেনি।ইরান, কোরিয়া, সৌদি আরব ও বাহরাইনের মতো বড় বড় দলের অংশগ্রহণে ১৯৭৮ সালের যুব ফুটবল পুরো বাংলাদেশ মাতিয়েছিল। প্রথম ম্যাচে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। সেটিও ছিল জয়ের সমান। এরপর ইয়েমেন ম্যাচের পর উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। সেই ম্যাচে অসাধারণ সব ‘সেভ’ করা গোলরক্ষক মঈনকেই বেশি মনে রেখেছে ফুটবলাঙ্গন। ফুটবল ক্যারিয়ারে এবং এর পরেও ক্রমে হাসানের আড়ালে যাওয়া যেন এভাবেই। অবশ্য যুব আসর শেষেই মূল জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন হাসান। গিয়েছিলেন ব্যাংক এশিয়ান গেমসে। ১৯৭৩ সালে ফায়ার সার্ভিস দিয়ে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু। সেখান থেকে দিলকুশা। পরের বছর মোহামেডানে গেলেও চোটের কারণে একটি মাত্র ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। এরপর রহমতগঞ্জে। সেবার লিগে রানার্স আপ হয় রহমতগঞ্জ। ’৭৮-এ যোগ দেন বিজেআইসিতে (পরবর্তী সময়ে বিজেএমসি)। প্রথমবার রানার্স আপ, পরের বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েই চমক দেখায় বিজেআইসি। আব্দুস সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে আক্রমণভাগে বিজেআইসির সে সাফল্যের অন্যতম রূপকারদের একজন হাসান। ‘সুপার লিগেই সেবার ১০-১২ গোল ছিল আমার। হ্যাটট্রিক করি ওয়ারীর বিপক্ষে। তার আগের লিগে হ্যাটট্রিক ছিল পিডাব্লিউডির বিপক্ষে।’—সোনালি দিনের স্মৃতি রোমন্থন করেন হাসান। ফুটবল অঙ্গনে হলেনই বা তিনি বিস্মৃত। কিন্তু তাঁর নিজের স্মৃতির সরণিতে আজও জ্বলজ্বলে সব মুহূর্ত।হাসানের ফুটবলগুরু ছিলেন কোচ বজলুর রহমান। ক্যারিয়ারজুড়ে কোচের কথার কখনো অন্যথা করেননি বলে এখনো গর্ব করেন, ‘ঢাকা লিগে আমার একটা লাল কার্ড বা হলুদ কার্ডও নেই।’ এমন সুশৃঙ্খল ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে নিজেই অবশ্য এই অঙ্গন থেকে দূরে থেকেছেন, ‘পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। আর তা ছাড়া এখানে যেচে পড়ে আমার কিছু করতে ইচ্ছা হয় না। মূল্যায়ন না পেলে কী করা যাবে। আমি তাই আড়ালেই আছি।’ হাসানের দুই ছেলের কেউ ফুটবলেও আসেননি। সেটি নিয়ে তাঁর মনে কোনো আক্ষেপও অবশ্য নেই, ‘আসলে ওরা যখন বড় হয়ে উঠছিল, তখন ফুটবল পড়তির দিকে। কিছুদিন বরং ক্রিকেট খেলেছে ওদের মামার উৎসাহে।’ আর নিজের উৎসাহে সোনালি স্মৃতির ফ্রেম থেকে অদৃশ্য ধুলা মোছেন হাসানুল হক, কেউ যে সেভাবে মনেই রাখেনি তাঁকে!
শেয়ার করুন
এই ধরনের আরও সংবাদ