বেসরকারি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী । সে সময় বিবস্ত্র করে ছবিও তুলে নেন ধর্ষকেরা। এখন ওই ভুক্তভোগী নারীকে নিয়মিত যৌনতায় বাধ্য করতে নানা ধরণের হুমকি দিচ্ছেন ধর্ষকেরা। প্রস্তাবে রাজি না হলে আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখানো হচ্ছে। সম্মানের ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না নির্যাতনের শিকার ওই নারী। ওই নারী জানান, ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর গুরুদাসপুরে ইন্স্যুরেন্সের কাজে এসেছিলেন তিনি। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের কামরুজ্জামান সোনা তাকে ইন্স্যুরেন্স খোলার জন্য গুরুদাসপুর বাসস্ট্যান্ডের অদূরে একটি তিনতলা ফ্লাটে নিয়ে যান। সেখানে আগে থেকেই আরও দুই যুবক উপস্থিত ছিলেন। তাকে ওই ফ্লাটের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে প্রথমে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন কামরুজ্জামান সোনা (৬৭)। এরপর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিবস্ত্র করে মোবাইল ফোনে ছবি তুলেন আবুল কালাম আজাদ নামের এক যুবক। এ সময় অন্য কক্ষে নিয়ে তিনিও ধর্ষণ করেন। পরে ফিরোজ আহম্মেদ নামের আরেক যুবক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে পায়ুপথে বিকৃত সঙ্গম করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। গণধর্ষণের শিকার ওই নারী বিচার চেয়ে সম্প্রতি গুরুদাসপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে শুক্রবার ধর্ষকদের ছবি হাতে সংবাদকর্মীদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন। লিখিত ওই অভিযোগে জানা গেছে, ফিরোজ আজম্মেদ নামের এক যুবক ওই নারীর সঙ্গে বিকৃত যৌনাচার করায় তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে জ্ঞান ফিরে এলে আবারও তাকে ধর্ষণ করেন আবুল কালাম আজাদ। এতে তিনি গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় অভিযুক্তরা কামরুজ্জামান সোনাকে মারধর করে বিকাশের মাধ্যমে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন। পরে রাত ৮টার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ইন্টারনেটে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানোয় অভিযোগ করতে পারেননি ওই নারী। জানা গেছে, গণধর্ষণের শিকার ওই নারীর আয়ে চলে চার সদস্যের সংসার। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি ইন্স্যুরেন্সের কাজে ছুটে চলেন। সেই দুর্বলতার সুযোগ নেন একই এলাকার বাসিন্দা কামরুজ্জামান সোনা। এই ব্যক্তি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। গুরুদাসপুরেও চাকরি করেছেন। সেই সুবাদে অভিযুক্ত ফিরোজ আহম্মেদের সঙ্গে পরিচয়। ফিরোজ গুরুদাসপুর পৌর সদরের বাসস্ট্রান্ড এলাকার মৃত তোফায়েল আহম্মেদের ছেলে। ফিরোজের এক সহযোগী আবুল কালাম আজাদ গুরুদাসপুরের সরকারি বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের প্রভাষক। তিনি উপজেলার রওশনপুর এলাকার বাসিন্দা। ভাড়া থাকেন গুরুদাসপুর পৌর সদরের বাসস্ট্রান্ড এলাকায়। অপর সহযোগী রনি আহম্মেদ চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা এলাকার বাসিন্দা। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে গুরুদাসপুর বাজার এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন। নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, অভিযুক্তরা ঘনিষ্ট বন্ধু। আগে থেকেই কামরুজ্জামান সোনার সঙ্গে অভিযুক্তদের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু তিনি তা বুঝতে পারেননি। তাকে ফাঁকি দিয়ে ডেকে নিয়ে সঙ্গবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেছেন। নিজের সঙ্গে হওয়া এই নির্যাতনের বিচার দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আবারও যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন ধর্ষকেরা। গণধর্ষণের বিষয়ে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সোনা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। এ ছাড়া অপর তিন অভিযুক্তের মধ্যে ফিরোজ আহম্মেদ ও আবুল কালাম আজাদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে রনি আহম্মেদ গা ঢাকা দেওয়ায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. উজ্জল হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, থানার অদূরে গণধর্ষণের ঘটনা দুঃখজনক। ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।