যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে দেশে বহুল চর্চিত বিষয় ছিল রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলে বাংলাদেশ নিয়ে তার নীতি কী হবে, আদৌ সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না। বাংলাদেশ ইস্যুতে ট্রাম্পের একটি টুইট সেই আলোচনা আরও উসকে দেয়। কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে ট্রাম্পের জয়ের পর ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।
ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবার রিপাবলিকান ঘনিষ্ঠ। যদিও তিনি বলেছেন ডেমোক্র্যাট পার্টিতেও তার বন্ধু আছে। তবু ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোন দিকে যাবে?
তবে কেউ কেউ বলছেন, ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় যাওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। নানান সময় বিভিন্ন পোস্টে ট্রাম্পকে নিজের বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে সেখানে আছেন এবং তার ইস্যুতে অনেকটা অনড় দেশটি। ফলে মোদী এই ইস্যুতে কোনো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি টুইট করেন। তবে তার এই টুইটকে নির্বাচনের কৌশল মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আমার ধারণা ট্রাম্প আসায় বাংলাদেশের সঙ্গে খুব একটা সম্পর্কের ঘাটতি হবে না। কারণ অর্থনৈতিক নানান কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং, শুধু ভারতের ইস্যু নয়, নিজেদের স্বার্থের দিকেও নজর রাখবে ট্রাম্প প্রশাসন।- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সাব্বির আহমেদ চৌধুরী
মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে শীতলতা চলছিল। এসময় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বক্তব্যেও তা প্রকাশ পাচ্ছিল। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র ইস্যুতে নানান নেতিবাচক মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। সেসময় বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কে অনেকটাই উষ্ণতা ফেরে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কি না- এমন প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শুধু যে দলের ভিত্তিতে হয় তা তো নয়, আমাদের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের যে সব বিষয় নিয়ে আলাপ চলছিল বা তাদের যেসব চাওয়া ছিল বা নেগোসিয়েশন হচ্ছিল সেগুলো কিন্তু এর পূর্ববর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও ছিল। কাজেই এটা বলা ঠিক হবে না, ট্রাম্প প্রশাসন এবং বাইডেন প্রশাসনের মাঝে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হবে। আমি সেটি মোটেও মনে করি না।