ঢাকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ ডিসেম্বর তার পালানোর চার মাস পূর্তি হলো। তবে এই সময়ে তিনি কোথায় গা ঢাকা দিয়ে আছেন, কী করে তার দিন কাটছে, তা নিয়ে কৌতূহল কম নেই। কৌতূহল থাকলেও তার অবস্থান সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যাচ্ছে না। কারণ, কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে তাকে রেখেছে ভারত সরকার।
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পাঁচদিন পর একটি ভিডিও বক্তব্য সামনে আসে। এরপর তার কয়েকটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার ভিডিও কনফারেন্সে অংশও নেওয়ার খবরও শোনা যায়।
ঢাকা ছাড়ার পর শেখ হাসিনা দিল্লিতে ছিলেন। তখন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, নয়াদিল্লির লোদি গার্ডেনের লুটেনস বাংলো জোনে একটি সুরক্ষিত বাড়িতে ছিলেন তিনি। ভারত সরকারই থাকার জন্য বাড়িটির ব্যবস্থা করে দেয়।
দুই মাস পর দিল্লি থেকে উত্তর প্রদেশের মিরাটের ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি বাড়িতে তাকে রাখা হয় বলে জানা যায়। সেখানেই একটি বাড়িতে তিনি রয়েছেন। নিরাপত্তার জন্য দিল্লি থেকে ৮৩ কিলোমিটার দূরে তাকে সরিয়ে নেয়া হয়। সেখানেই এখনো তার সর্বশেষ অবস্থানের খবর গণমাধ্যম বিভিন্ন সূত্র দিয়ে প্রকাশ করেছে।
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যেই তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যায়। তারপর থেকে তিনি ভারতে কোন স্ট্যাটাসে আছে, সেটিও প্রকাশ করেনি ভারত। এ ছাড়া ভারতে শেখ হাসিনা কোথায় এবং কীভাবে দিন কাটাচ্ছেন, সেটিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে গোপন রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে ভারতের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে সেদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিজেপি সরকারের একটি সমঝোতা হয়েছে। সব রাজনৈতিক দলই শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে তাকে আশ্রয় দেওয়াটা বিজেপি সরকারের জন্য খুব সহজ হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে কেন এত গোপনীয়তার মধ্যে রাখা হয়েছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ভারতীয় কূটনীতিকেরা। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, নিরাপত্তার জন্যই শেখ হাসিনাকে গোপনীয়তার সঙ্গে রাখা হয়েছে। অন্য কোনো কারণে নয়।
শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ের নেওয়ার আট দিন পর ১৪ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা প্রথম বৈঠক করেন। প্রথম বৈঠকেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হাইকমিশনারকে সতর্ক করেন, শেখ হাসিনা ভারত থেকে যেন কোনো বক্তব্য না দেন।
তিনি ভারতীয় হাইকমিশনারকে জানান, যদি ভারত থেকে শেখ হাসিনা বক্তব্য দিতে থাকেন, তবে সেটি দুই দেশের সম্পর্কের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ধারণা করা হচ্ছে, সে অনুযায়ী মিডিয়ায় শেখ হাসিনার বক্তব্য তেমন আসেনি।
অবশ্য শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিলেও দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, একজন (শেখ হাসিনা) যদি কোনো এক দেশে গিয়ে থাকে, তাহলে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হবে কেন? তার তো কোনো কারণ নেই। দ্বিপক্ষীয় বিষয় অনেক বড়। এটি স্বার্থের সম্পর্ক।
এদিকে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে বলে সরকারের নীতি নির্ধারকেরা জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হলে তাকে ফেরত চাওয়া হবে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছেন, জুলাই-অগাস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব।