ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেইন্ট ভিনসেন্টে সময়টা ১৫ ডিসেম্বরের শেষ প্রহর। হাজার কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশে ঘড়ির কাটায় এরই মধ্যে ১৬ ডিসেম্বর। আজকের দিনে বাংলাদেশ পালন করছে বিজয়ের ৫৩ বছর। ১৬ই ডিসেম্বরের সকালে দেশের মানুষের উৎসবের উপলক্ষ্যটা আরেকটু চওড়া হলো টিম টাইগার্সের শ্বাসরুদ্ধকর এক জয়ের সুবাদে।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১০ রান। ক্রিজে তখনো ছিলেন বিধ্বংসী ব্যাটার রভম্যান পাওয়েল। রোমারিও শেফার্ডের সঙ্গে যার ৩৩ বলে ৬৭ রানের জুটি বাংলাদেশের জয়টাকে অনেকখানি বিলম্বিত করেছে। হাসান মাহমুদের শেষ ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য হলেন তিনি। সেখানেই মূলত জয়টা নিশ্চিত হয়ে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের জন্য। এরপর এক বল বিরতি দিয়ে বোল্ড আলজারি জোসেফ। তাতেই নিশ্চিত দারুণ এক জয়।
দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেই বাংলাদেশের আসল পারফরম্যান্সের দেখা মেলে। ক্রিকেটপাড়ায় বহুল চর্চিত এই বাক্যটাই যেন পূর্ণতা পেল নতুন করে। ওয়ানডে সিরিজ হারের পর সমালোচনার তীরে বিদ্ধ ছিল বোলিং লাইনআপ। বিশেষ করে ৩২১ রান সংগ্রহ করেও বোলারদের ব্যর্থতায় ম্যাচ হেরেছিল দল। আজ সেই বোলাররাই হলেন জয়ের মুখ্য নায়ক।
পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন তাসকিন আহমেদ। আর তার ফলাফল পরের ওভারে পেলেন মেহেদি। তার স্কিড করা বল আন্দ্রে ফ্লেচারের ব্যাটের কিনারা ছুঁয়ে চলে যায় লিটনের হাতে। এক বল বিরতি দিয়েই সেই মেহেদি-লিটন কম্বিনেশনে আউট হয়েছেন রস্টন চেজ।
শেখ মেহেদি স্পেল শেষ করেন ৯ রানে ৪ উইকেটের বিনিময়ে। বাংলাদেশকে মূলত চালকের আসনে বসিয়ে দেয় ওই স্পেলটাই। কিন্তু সেই চার ওভার শেষ হতেই মূলত টাইগার বোলারদের ওপর চেপে বসেন রভম্যান পাওয়েল। গুদাকেশ মোতিকে নিয়ে চেষ্টা করেছিলেন ইনিংস মেরামতের। তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ করেছেন তানজিম সাকিব। খানিক পরেই আকিল হোসেনকে ফেরান রিশাদ। ৬১ রানেই নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৭ উইকেট।
সেখান থেকেই শুরু পাওয়েল-রোমারিও জুটি। যেখান থেকে ৩৩ বলে ৬৭ রান যোগ করেছেন দুজনে। ১৭ বলে ২২ রান যোগ করেছেন রোমারিও। অপরপ্রান্তে থাকা পাওয়েল ১৬ বলে তুলেছেন ৪২ রান। বিপজ্জনক এই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। রোমারিও শেফার্ড ধরা পড়েন বাউন্ডারি লাইনে রিশাদের হাতে। আর শেষ ওভারে বাকি কাজটা সারেন হাসান মাহমুদ।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই আকিল হোসেনের জোড়া উইকেট শিকারে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ফিরে যান আফিফ হোসেনও। ৩ উইকেটের পতনে বেশ চাপেই পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সেখান থেকে দলকে পথ দেখান জাকের আলী অনিক এবং সৌম্য সরকার। দুজনের ৪২ বলে ৫৭ রানের জুটিতে অবশ্য দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছিল ডটবল। সেই তাগিদেই বড় শট খেলতে গিয়ে দুর্ভাগ্যের আউট হয়েছিলেন জাকের। বাউন্ডারি লাইনে দারুণ এক ক্যাচে ফিরতে হয়েছিল তাকে। এরপরেই ফিরে যান সৌম্য সরকারও। যদিও সেটা বাংলাদেশের জন্য শাপেবর হয়েই ধরা দেয়।
১ বছর পর জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নেমেই দারুণ ব্যাটিং করেছেন শামীম পাটোয়ারী। তার ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংসে ছিল ৩ ছক্কা আর ১ চার। শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশ যোগ করেছেন ৫১ রান। সেটাই স্কোরকে নিয়ে যায় ১৪৭ পর্যন্ত। পরবর্তীতে আর্নেস ভ্যালি স্টেডিয়ামে সেটাই বাংলাদেশের জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।