খুলনা থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকার পথে যাত্রা করেছে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’।
খুলনা রেলস্টেশন মাস্টার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশিক আহমেদ বলেন, আজকে সকাল ৬টায় জাহানাবাদ ট্রেনটি প্রথমবারের মতো খুলনা রেলস্টেশন ছেড়ে গেল। এটি সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রথমদিন খুলনা থেকে ৫৫৩ জন যাত্রী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ট্রেনের সিট রয়েছে ৭৬৮টি। এই ট্রেনে ১১টি যাত্রীবাহী কোচ এবং একটি লাগেজ ভ্যান রয়েছে। ধারণক্ষমতার ৬৯ শতাংশ যাত্রী খুলনা থেকেই যাত্রা করেছে। এছাড়া অন্যান্য স্টেশন থেকে যাত্রীরা উঠবে। নওয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া, নড়াইল, কাশিয়ানী, পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকায় যাবে। ট্রেনটি সাপ্তাহিক ছুটি সোমবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ঢাকা থেকে রওনা হবে রাত ৮টার দিকে।
নগরীর খালিশপুর গোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দা যাত্রী সোহেল হোসেন বলেন, শীতকালে ভোর ৬টায় অন্ধকার থাকে। ট্রেনে যাওয়ার জন্য আমি ভোর সোয়া ৫টায় বাসা থেকে বের হই। এরপর স্টেশনে আসার জন্য সিএনজি পেতে অনেক সময় লেগেছে। সকাল ৬টার পরিবর্তে শিডিউল এক ঘণ্টা বাড়ানো বা ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হলে অনেক ভালো হতো।
নতুন এই ট্রেনের বিষয়ে মো. শহীদ হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, এই ট্রেনটি খুলনাবাসীর জন্য আশীর্বাদ। ট্রেন যখন চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা ঘুরে যেত তখন কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন সাড়ে ৩ ঘণ্টা থেকে পৌনে চার ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছাতে পারব। এতে খুলনাবাসীর জন্য খুবই ভালো হয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী সকাল ৬টায় যাত্রায় যাত্রীদের জন্য একটু কষ্টকর। তবে ট্রেনের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
মো. ইসরাইল বলেন, ট্রেনটি খুলনার জন্য একটি আশীর্বাদ এবং বহু আকাঙ্ক্ষিত। তবে ট্রেনের সূচি আরও এগিয়ে দিলে ভালো হতো। এতো স্বল্প সময়ে ট্রেনে করে খুলনা থেকে ঢাকা যাব কখনোই আমরা ভাবিনি। মাত্র ৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় যাওয়া যাচ্ছে ট্রেনে। এখন বাসের সময়ের মধ্যেই ট্রেনে যাওয়া যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য উপহার দিয়েছেন বর্তমান সরকার।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, বিদেশ থেকে ট্রেনের নতুন ইঞ্জিন ও বগি আনা হচ্ছে। ৬ মাস পর এই রুটে নতুন আরও ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে তিনটি ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে দুটি আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস। আর একটি নকশিকাঁথা কমিউটার ট্রেন চলাচল করে। নতুন করে যুক্ত হচ্ছে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে খুলনায় যাচ্ছে। এতে ৮ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
রেলের দেওয়া সময়সূচি অনুসারে, জাহানাবাদ এক্সপ্রেস সাপ্তাহিক বন্ধের দিন (সোমবার) ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ছেড়ে নোয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী জংশন, ভাঙ্গা জংশন হয়ে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। আর ঢাকা থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে খুলনা পৌঁছাবে। একই ট্রেন রূপসি বাংলা এক্সপ্রেস নামে ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছাবে দুপুর আড়াইটায়। আর বিকেল সাড়ে ৩টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে যশোর জংশন, নড়াইল, কাশিয়ানী জংশন ও ভাঙ্গা জংশন হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে।
অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু সেতু হয়েই চলাচল করছে। এই ট্রেনের সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টা। এর বাইরে বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া হয়ে যশোরের বেনাপোলে যায়। এতে সময় লাগছে সাড়ে ৭ ঘণ্টা। এ ছাড়া খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে কমিউটার নকশিকাঁথা ট্রেন চলাচল করছে। এটি খুলনা থেকে রাত ১১টায় ছেড়ে যশোর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, ভাঙ্গা হয়ে ঢাকায় পৌঁছায় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। এতে ১০ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। ফলে নতুন ট্রেনে সময় সাশ্রয় হবে অন্তত ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। এছাড়া সুন্দরবন ও চিত্রা ট্রেনের চেয়ে ভাড়াও কম লাগছে জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনে।