শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

ঢাকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে নয়াদিল্লি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৫ প্রদর্শন করেছেন

প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে করা ঢাকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে নয়াদিল্লি। কারণ চুক্তির মধ্যে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগ রয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমটির গভীর বিশ্লেষণমূলক অনুষ্ঠান ‘ইনসাইড স্টোরি’তে ‘বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীকে ভারত কি প্রত্যর্পণ করবে?’ শিরোনামে ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও প্রতিবেদন মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অভিযোগে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করতে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে গত সোমবার দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক পত্র দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে আদ্রিয়ান ফিনিঘানের উপস্থাপনায় ইনসাইড স্টোরিতে কথা বলেন ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত, যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সোহেলা নাজনীন ও বাংলাদেশের নারী অধিকারবিষয়ক সংগঠন নারীপক্ষের সহপ্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক।

অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্তের কাছে আদ্রিয়ান ফিনিঘানের প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের প্রতি যে অনুরোধ জানানো হয়েছে, তা নিয়ে নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়া কেমন হতে হবে? ঢাকার এই অনুরোধ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে। আপনি কী মনে করেন?

জবাবে অধ্যাপক শ্রীরাধা বলেন, নিঃসন্দেহে এটি (শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ) একটি বেশ জটিল প্রক্রিয়া। এখানে রাজনৈতিক বিবেচনাসহ আরও কিছু বিষয় আছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কতটা নিরপেক্ষ, তা-ও ভেবে দেখবে ভারত। পাশাপাশি কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ও রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতের কাছে শুধু কূটনৈতিক পত্র দেওয়া হয়েছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেওয়া হয়নি। সেটাও বিবেচনায় নেবে ভারত। এ ছাড়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটা ন্যায়বিচার পাবেন- এ ধরনের নানা বিষয়ও আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

একই রকম এক প্রশ্নের জবাবে সোহেলা নাজনীন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে যে প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়েছে, তাতে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের সুযোগ রয়েছে। সাধারণত যেকোনো প্রত্যর্পণ চুক্তিতে এ ধরনের কিছু শর্ত থাকে। যেমন কোনো দেশ যদি মনে করে ফেরত পাঠানো ব্যক্তির ক্ষেত্রে সুষ্ঠু বিচারপ্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে না, সে ক্ষেত্রে চুক্তিবদ্ধ কোনো দেশ প্রত্যর্পণ আহ্বানে সাড়া না-ও দিতে পারে। আর শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে ভারত কী করবে, তা ভারত সরকারই ভালো বলতে পারবে।

এরপর তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তিনি কি ন্যায়বিচার পাবেন? আপনার কী মনে হয়? জবাবে সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রিসার্চ ফেলো বলেন, এটা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কী ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে, সেটার ওপর নির্ভর করছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমি আশা করব, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে তারা সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে।

পরে নারী অধিকারবিষয়ক সংগঠক শিরীন হকের কাছে আদ্রিয়ান ফিনিঘানের প্রশ্ন ছিল, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালকে কতটা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়? এই মধ্যে তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে অভিযোগ করেছেন, তার মা ও আওয়ামী লীগের নেতারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাদের বিচারের কথা বলা হচ্ছে।

জবাবে শিরীন হক বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার আমলেই নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছিল। কিন্তু তা দূর করার জন্য তার সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন তিনিই (শেখ হাসিনা) এই ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই আশা করব, বিচারে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে, অবাধ ও সুষ্ঠু বিচার হবে।

তবে সবকিছু অনিশ্চিত- এমন মন্তব্য করে শিরীন হক বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটার সঙ্গে তিনি একমত নন। এর একটি কারণ হলো, ২০১৩ সালে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে চাপ তৈরি করতে শাহবাগে (আওয়ামী লীগ) সরকারের পক্ষে গণজাগরণ হয়েছিল, সেখানে ফাঁসি দাবি করা হয়েছিল। এভাবেই ট্রাইব্যুনালটি বিতর্কিত হয়েছিল। এবার সে রকম কিছু হচ্ছে না।

এমনকি তিনি আশা করেন, এবার তেমনটি হবে না, ভিন্ন কিছু হবে।একইসঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে ভারত অতীতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণ করেছে জানিয়ে শিরীন হক বলেন, শেখ মুজিব হত্যা মামলার আসামি আবদুল মাজেদকে ফেরত পাঠিয়েছিল নয়াদিল্লি। যেহেতু অতীতে অভিযুক্তদের ভারত প্রত্যর্পণ করেছে, তাই দেশটি এবারও ঢাকার প্রত্যর্পণের অনুরোধে সাড়া দেবে বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে, নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সম্প্রতি বলেছে, বাংলাদেশ যত দিন মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করবে না, তত দিন দিল্লিকে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের আশ্রয় দিতে হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এমন মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে শিরীন হক জানান, তারা বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বাতিল চেয়েছে। মামলা যেমনই হোক, তিনি নিজেও সব ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে। তবে তাকে (শেখ হাসিনা) বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন নারীপক্ষের এই সহপ্রতিষ্ঠাতা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ