নিজেস্ব প্রতিবেদক : আমাদের দেশে উৎপাদিত চিংড়ির দাম বিদেশের বাজারে তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় রপ্তানির পরিমাণ সামান্য কমেছে, তবে দেশে চিংড়ির বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে। ফলে উৎপাদিত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানিতে ভাটা পড়লেও উৎপাদকরা তা বাজারজাতকরণে সমস্যায় পড়ছেন না। চিংড়ি উৎপাদক, রপ্তানিকারক ও মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৮০-এর দশকে মূলত চিংড়ি চাষ শুরু ও বিস্তার ঘটেছিল বিদেশি বাজারের ওপর নির্ভর করে। তখন উৎপাদিত চিংড়ির প্রায় শতভাগ বিদেশে রপ্তানি হতো।
কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইউরোপের বাজারে মন্দা, কভিড এবং ভিয়েতনাম ও চীনে উৎপাদিত তুলনামূলকভাবে কম দামি ভেনামি চিংড়ির দাপটে আমাদের দেশে উৎপাদিত গলদা ও বাগদা চিংড়ি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছিল না। দীর্ঘদিন থেকে রপ্তানিকারকরা দেশে ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনের দাবি জানিয়ে আসছিল। তবে আশার কথা হলো, দেশেই চিংড়ির বড় বাজার তৈরি হয়েছে।
৩০-৪০ বছরের ব্যবধানে দেশের বিরাট একটা অংশের মানুষ তাদের খাবারের তালিকায় গলদা বা বাগদা চিংড়ি রাখছে, যা আগে ছিল না। এতে উৎপাদিত চিংড়ির বাজারজাতকরণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। মৎস্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, সুন্দরবন উপকূলীয় জেলা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় মূলত চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। সামান্য কিছু চিংড়ির চাষ হয় কক্সবাজারে।
খুলনা অঞ্চলে এখনো বিপুল পরিমাণে চিংড়ির উৎপাদন হয়। চিংড়ি রপ্তানীকরণ কারখানাগুলোর বেশির ভাগই খুলনা অঞ্চলে। গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে চিংড়ির উৎপাদন ছিল দুই লাখ ৬১ হাজার ১৫৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বিদেশে রপ্তানি হয়েছে ৩০ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন। আর বাকি চিংড়ি দেশের বাজারেই বাজারজাত হয়েছে। দেশের বাজারে চিংড়ির দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
ডুমুরিয়ার চিংড়ি চাষি আবু বকর কালের কণ্ঠকে বলেন, মৎস্য বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় তিনি বেশ কয়েক বছর তাঁর পাঁচ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করছেন। শুরুর দিকে চিংড়ির দাম পাবেন কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও এখন আর চিংড়ি বিপণন ও দাম নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। তাঁর উৎপাদিত চিংড়ি ব্যবসায়ীরা খামার থেকেই কিনে নিয়ে যান। সেই চিংড়ি স্থানীয় বাজারেও যেমন বিক্রি হয়, তেমনি রপ্তানিকারকরাও কিনে থাকেন।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব কুমার পাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদেশে চিংড়ি রপ্তানির পাশাপাশি দেশের বাজারে চিংড়ির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চিংড়ি চাষিরা দামও পাচ্ছেন বেশ। এই পণ্যটি আর রপ্তানিনির্ভর পণ্য নেই। শুধু রপ্তানিনির্ভর পণ্য হলে তা টিকে থাকার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হয়, চিংড়ির ক্ষেত্রে সেই শঙ্কা নেই। এটি ঠিক যে, রপ্তানির সুযোগ থাকায় চিংড়ি চাষের বিস্তার ঘটেছিল, এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা অনেক বেড়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিএফএফইএর পরিচালক ও আমাম সি ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দামের কারণে বিদেশের বাজারে আমাদের চিংড়ি একটু পিছিয়ে আছে। কারণ, অন্যান্য দেশ থেকে তুলনামূলকভাবে কম দামে ভেনামি রপ্তানি হচ্ছে। তাই বলে আমাদের চিংড়ি যে রপ্তানি হচ্ছে না, তা নয়; তবে আশানুরূপ নয়। আর এটা ঠিক যে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার এখন অনেক বড়। আগে খুলনা অঞ্চলে বিশেষ সময়ে গলদা চিংড়ি খাওয়ার প্রচলন ছিল, এখন গলদা বা বাগদা চিংড়ি একেবারে সাধারণ খাবার তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে।’