রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

কেন ‘গায়েব’ হয়ে গিয়েছিলেন, জানালেন নোবেল

প্রতিবেদকের নামঃ
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ১১৪ প্রদর্শন করেছেন

কবি নজরুলের কারার ঐ লৌহ কপাট, নগর বাউল জেমসের মা এবং আইয়ুব বাচ্চুর এই রুপালি গিটার কলকাতার মানুষের মুখে মুখে। কলকাতায় এই গান গেয়ে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিলেন সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেল। গত ২০১৮ সালে ওপার বাংলার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি ‘সারেগামাপা’য় একের পর এক পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে বেশ আলোচনায় আসেন তিনি।

এরপর নোবেলের জনপ্রিয়তার খবর রটে যায় বাংলাদেশে। অল্প সময়েই দেশের মানুষের কাছ থেকেও পেতে থাকেন অসম্ভব ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা ধরে রাখতে পারেননি নোবেল। মুহূর্তেই হারিয়ে যান অন্ধকারের গর্ভে। তাকে নিয়ে ছিল ব্যাপক সমালোচনা। সামাজিকমাধ্যমে বিভিন্ন আপত্তিকর মন্তব্য করে ‘মাদকাসক্ত’ তকমা পেয়ে যান একসময়ের সবার চোখের মণি। তবে তিনি যে এক আসক্তিতে ছিলেন, তা বলা বাহুল্য। তার ভক্ত-অনুরাগীদের প্রার্থনা ছিল— শুধু তার সুস্থতা কামনায়। কারণ নোবেল সুস্থ হয়ে ফিরে এলেই আবার শোনা যাবে তার সেই ঝাঁজালো কণ্ঠের গান।

গত বছর মাদকমুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয় নোবেলকে। তবে সেখান থেকে ছাড়া পান তিনি। এতদিন বাড়িতেই ছিলেন। এবার প্রকাশ্যে এসে স্বীকার করে নিলেন অনেক কিছুই হারিয়েছেন তিনি। নিজের ওপর রাগ হচ্ছে, ঘৃণা হচ্ছে, সে কথাই জানালেন নোবেল।

তার পেশাগত জীবন হোক বা ব্যক্তিগত জীবন— চর্চা অব্যাহত দুই বাংলায়। একাধিক বিয়ে, প্রতারণা কিংবা গার্হস্থ্য হিংসা, মাদক সেবন থেকে শুরু করে গানের অনুষ্ঠানে গিয়ে দর্শকের সামনে অসভ্য আচরণ করা, হাজার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
এ মুহূর্তে হাতে বিশেষ কাজ নেই। কারণ বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেল নিজেই জানান, তিনি নিজেকে সংশোধন করে নিয়েছেন। তবে আফসোস হয় পেছনে ফিরে তাকালে। মনে পড়ে ‘সারেগামাপা’র দিনগুলোর কথা।

নোবেল স্বীকার করে নেন, গত কয়েক বছর অনেক ঘটনা ঘটিয়েছি। আগেই বলেছি— এর জন্য আমি দায়ী। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। একজন শিল্পী হিসেবে যা করেছি, ঠিক হয়নি। মানুষ পছন্দ করেননি। এখন মনে হয়, আমার কাছে যদি টাইম মেশিন থাকত, তা হলে অতীতে ফিরে গিয়ে নিজেকে সংশোধন করে নিতাম। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। ব্যক্তিজীবন, কর্মজীবনে জীবনে অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেছি।

অনেকে কিছু হারিয়েছেন যেমন, তেমনই নোবেল জানান— এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে, তা মাথায় রাখবেন। তিনি বলেন, জীবনে যা ঘটে গেছে, সেসব আর নতুন করে যেন না ঘটে, খেয়াল রাখব। কর্মজীবনে সেই আগের জায়গায় পৌঁছতে পারব কিনা জানি না, তবে চেষ্টা থাকবে আগের অবস্থানের কাছাকাছি হলেও যেন ফিরতে পারি।

এ সংগীতশিল্পীর অনুরাগীরাও তাকে নিয়ে আকাঙ্ক্ষা কম নয়। ভক্তরা এখনো আশা করেন, নোবেলের মতিগতি কি ঠিক হয়েছে, নাকি আগের মতোই আছে? তবে অনুরাগীদের সেই সংকোচ অবশেষে কাটতে চলেছে। নোবেল ফিরে আসছেন সেই আগের রূপে ও গুণেই—এমনটিই জানালেন এ শিল্পী।
নোবেল অবশেষে তার ভুলত্রুটিগুলো বুঝতে পেরেছেন। শুধরে নিয়েছেন নিজেকে। স্বীকার করলেন, আসক্তি নামের একটি বিষয়ের সঙ্গে খারাপ সময় কেটেছে তার। নিজেকে শোধরাতে কাটাতে হয়েছে রিহ্যাবেও।

এর আগে এক সাক্ষাৎকারে নোবেল বলেন, একটা আসক্তিতে পড়ে যাই। আমার সম্মতি সাপেক্ষেই আমি রিহ্যাবে কাটিয়েছি। এখন আমি এগুলো থেকে বিরত আছি, সম্পূর্ণরূপে বিরত। সেই জগতে আমার আর ফিরে যাওয়ারও ইচ্ছে নেই। এখানে কাউকে দোষারোপ করার কিছু নেই, সবকিছুর জন্য আমিই দায়ী।

খানিকটা ভীত কণ্ঠে নোবেল বলেন, অনেকের থেকে দূরে সরে যাওয়ায় একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। আমার কিছু কার্যকলাপ, সেসব ভুল ছিল। সব মিলিয়ে আমার আচার-আচরণ একটু অন্যরকম হয়ে গিয়েছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে যারা মূলত আমাকে দিয়ে কাজ করাবেন, তাদের সঙ্গেও আমার একটা দূরত্ব তৈরি হয়, ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এর ফলেই আমি ‘গায়েব’ হয়ে যাই আরকি।

এই সংগীতশিল্পী বলেন, মানুষ আমার কাছে যা প্রত্যাশা করেছিল, আমি সে অনুযায়ী চলতে পারিনি। আমার প্রফেশন গান গাওয়া, গান থেকেই মানুষ আমাকে চিনেছে। তবে আমার যে ভুলভ্রান্তিগুলো ছিল, যেমন— কিছু উদ্ভট কথাবার্তা— এসব থেকে নিজেকে বিরত থাকি, তাহলে আমার চলার পথটা আরও সহজ হবে।

বর্তমানে নোবেলের হাতে কিছু গান ও সিনেমা রয়েছে, যা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য নির্মাণ হবে। যদিও এ মুহূর্তে শুধু গান নয়, এর মধ্যে একটিতে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাকে। পর্দায় খলনায়ক চরিত্র নিয়েই ফিরতে চান এ গায়ক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ