সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ অপরাহ্ন

সন্তানের হাতে খুন মা-বাবা! মুক্তির পর থেকেই সিরিজটি নিয়ে বিতর্ক

প্রতিবেদকের নামঃ
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২১ প্রদর্শন করেছেন
‘মনস্টার’ সিরিজের দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

হোসে মেরেনডেজের গল্পটা হয়তো অনেকেরই জানা, কেউ আবার না–ও জানতে পারেন। কিউবায় বিপ্লবের পর ‘আমেরিকান ড্রিম’ সত্যি করতে তরুণ বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে হাজির হয়েছিলেন জোসে। রেস্তোরাঁয় ডিশ ওয়াশের কাজ দিয়ে শুরু। এরপর নানা সংগ্রাম করে পড়াশোনা শেষ করেন, হন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। এ পর্যন্ত তাঁর জীবনের গল্প সিনেমা বা সিরিজ নির্মাণের জন্য যথেষ্ট ছিল, তবে মূল ঘটনা তখনো শুরুই হয়নি।

‘মনস্টার’ সিরিজের দৃশ্য। নেটফ্লিক্স

হোসের ছিল দুই ছেলে লায়েল ও এরিক মেরেনডেজ; আপাতদৃষ্টে সুখী সংসার। তবে এই মেরেনডেজ পরিবার হঠাৎই আলোচনার কেন্দ্রে আসে ১৯৮৯ সালে। লায়েল ও এরিকের হাতে খুন হন তাঁদের মা-বাবা ম্যারি লুসি কিটি ও হোসে মেরেনডেজ! ১৯৯৬ সালে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর দুই ভাইয়েরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। পরে দুই ভাই জানান, বাবার হাতে দীর্ঘদিন শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাঁরা। আলোচিত এ ঘটনা এবার উঠে এসেছে পর্দায়।

বাস্তব অপরাধের কাহিনি নিয়ে নির্মিত হয় নেটফ্লিক্সের ‘মনস্টার’ সিরিজ। লায়েল ও এরিকের ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে এবারের কিস্তি। চলতি সপ্তাহেও নেটফ্লিক্সের টিভি সিরিজের তালিকায় শীর্ষে আছে ‘মনস্টার’। তবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মুক্তির পর থেকেই সিরিজটি নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

সিরিজের দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কুপার কোচ ও নিকোলাস আলেকজান্ডার চাভেজ। তাঁদের মা-বাবার চরিত্রে দেখা গেছে ক্লোয়ি সিভিগনি ও হাভিয়ের বারদেমকে। সিরিজটির নির্বাহী প্রযোজক রায়ান মার্ফি ও ইয়ান ব্রিনান।

মুক্তির প্রথম পাঁচ দিনেই সিরিজটির ভিউ ১২ দশমিক ৩ মিলিয়নের বেশি। ‘মনস্টার’-এর জনপ্রিয়তা সহজেই অনুমান করা যায়। তবে সমালোচকেরা মনে করেন, সিরিজের কিছু বিষয় প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আরও সংবেদনশীল হতে পারত। নির্মাতাদের ভাষ্য, সিরিজে দুই সন্তান, তাঁদের মা-বাবা উভয়ের দৃষ্টিভঙ্গি উঠে এসেছে। দীর্ঘ গবেষণার পরই সিরিজটি বানিয়েছেন তাঁরা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান সিরিজটিকে ‘ক্লান্তিকর’ ও ‘পুনরাবৃত্তিমূলক’ বলে অভিহিত করেছে। অনলাইন গণমাধ্যম ইন্ডিওয়্যারের মত, সিরিজটি ‘অগোছালো’। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ মনে করে, সিরিজটির বিষয় ‘অতি সংবেদনশীল’, যা তুলে ধরার ক্ষেত্রে আরও সচেতনতার প্রয়োজন ছিল।

এরিক ও লায়েল মেরেনডেজের বয়স এখন ৫৩ ও ৫৬; দুজনই সান ডিয়েগোর একটি জেলখানায় সাজা খাটছেন। মনস্টার মুক্তির পর এরিক তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে একটি বিবৃতি দেন। সেখানে তিনি সিরিজটিকে ‘হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করেন।

এক্সে পোস্ট করা বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘নেটফ্লিক্স খুব অসততার পরিচয় দিয়েছে, এতে আমরা ভীষণভাবে ব্যথিত। ওই বিয়োগান্ত ঘটনা, আমাদের অপরাধ এবং প্রতিষ্ঠিত সত্যকে এই শো পেছনের দিকে নিয়ে গেছে। এটা দেখে অনেকের মনে হতে পারে, পুরুষেরা যৌন নির্যাতনের শিকার হন না। আমরা বলতে চাই, ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর পুরুষদের ট্রমা নারীদের চেয়ে আলাদা হয়।’

‘মনস্টার’ নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের মধ্যে মুখ খুলেছেন সিরিজটির অন্যতম স্রষ্টা বিল মার্ফি। অনলাইন গণমাধ্যম এন্টারটেইনমেন্ট টুনাইটকে তিনি বলেন, ‘সে (এরিক) শো না দেখেই বিবৃতি দিয়েছে, এটা খুবই অদ্ভুত। আসলে নিজের জীবনের এসব ঘটনা পর্দায় দেখা কঠিন। এই সিরিজের ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ তাদের নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে; তাদের সঙ্গে কী হয়েছিল, সেটা তুলে ধরা হয়েছে।’

মার্ফি আরও বলেন, তাঁরা কেবল দুই সন্তান নয়, সিরিজটিতে তাঁদের মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে এনেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, সন্তানের হাতে মা-বাবার খুন হওয়া, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার গল্প পর্দায় তুলে আনতে গেলে বিতর্ক তৈরি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ