যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করছেন। স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটন থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নেমে আসেন তারা। গাজার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের প্রথম বার্ষিকীকে সামনে রেখে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির দাবি তাদের।
এই বিক্ষোভ চলাকালীনই হোয়াইট হাউজের সামনেই এক প্রতিবাদকারী আত্মাহুতির চেষ্টা করেন, যা বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে বলেই দাবি করেন ওই ব্যক্তি।
প্রতিবাদকারীরা মূলত ফিলিস্তিন ও লেবাননে ইসরাইলের সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করছেন। বিশেষ করে লেবাননে সাম্প্রতিক হামলার পর থেকে যা আরও বেড়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলমান যুদ্ধের ৩৬৫তম দিনে গাজায় ৪১,৮২৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৯৬,৯১০ জন আহত হয়েছেন।
এরই প্রেক্ষিতে শনিবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে কয়েক হাজার প্রতিবাদকারী সমবেত হন। যারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা ও ইসরাইলকে সমর্থন বন্ধ করার আহ্বান জানান।
প্যালেস্টিনিয়ান ইয়ুথ মুভমেন্টের সংগঠক জায়েদ খতিব এএফপিকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার দেখিয়েছে যে তারা ইতিহাসের কোন পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা এই শতকের সবচেয়ে বড় নৃশংসতার জন্য দায়ী’।
প্রতিবাদকারীরা প্যালেস্টাইন ও লেবাননের পতাকা নাড়াচ্ছিলেন এবং স্লোগান দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনের অধিকারের পক্ষে।
এই বিক্ষোভের দুই ঘণ্টা পর এক ব্যক্তি হঠাৎই আত্মাহুতির চেষ্টা করেন। তিনি তার বাঁ হাতে আগুন ধরানোর পরপরই আশেপাশের লোকজন পানি ঢেলে সেই আগুন নিভিয়ে দেন।
এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে চিৎকার করে বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক, আমরাই ভুল তথ্য ছড়াই’।
তিনি মূলত সংবাদ মাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য সাংবাদিকদের দোষারোপ করেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে এবং ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা জোরদার করে।
আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তার আঘাত প্রাণঘাতী নয়।
স্থানীয় পুলিশও জানায়, ওই ব্যক্তিকে ‘প্রাণঘাতী নয় এমন আঘাত’ নিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনি সিবিএস-এর সঙ্গে যুক্ত একজন সাংবাদিক এবং তিনি মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য ওই সংবাদ মাধ্যমকে দোষারোপ করছিলেন।
এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আগেও গত ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যারন বুশনেল ওয়াশিংটনে ইসরাইলি দূতাবাসের বাইরে আত্মাহুতি দেন। যা ছিল গাজার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রতি ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের প্রতিফলন।
যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে চারজন ব্যক্তি গাজায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আত্মাহুতির চেষ্টা করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে এক ব্যক্তি আটলান্টার ইসরাইলি কনস্যুলেটের সামনে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে আত্মাহুতির চেষ্টা করেন এবং মারাত্মকভাবে আহত হন।
আর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ২৫ বছর বয়সি অ্যারন বুশনেল ওয়াশিংটনের ইসরাইলি দূতাবাসের সামনে আত্মাহুতি দেওয়ার পর হাসপাতালে মারা যান। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে ম্যাট নেলসন নামের এক ব্যক্তি বোস্টনের ইসরাইলি কনস্যুলেটের কাছে আত্মাহুতি দিয়ে মারা যান।
এদিকে শনিবার নিউইয়র্কেও টাইমস স্কোয়ারে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। যেখানে অনেকেই ইসরাইলি সামরিক অভিযানে গাজার নিহতদের ছবি বহন করছিলেন।
এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন প্রার্থী নাগরিক অধিকারকর্মী কর্নেল ওয়েস্ট বলেন, ‘আমি চিরকাল এই নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে থাকতে চাই’।
এদিন লস অ্যাঞ্জেলেসেও একইভাবে হাজার হাজার মানুষ ‘গাজায় গণহত্যা’ বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নামেন। আর ওয়াশিংটনের অফিস ভবনের সামনে থেকেও ‘ন্যায়বিচার’ ও ‘শান্তি’র দাবিতে স্লোগান শোনা যাচ্ছিল।
এ প্রসঙ্গে ড্যানিয়েল পেরেজ নামের এক মার্কিন নাগরিক বলেন, ‘আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমাদের ট্যাক্সের অর্থই ইসরাইলকে দেওয়া হচ্ছে। যে অর্থ দিয়েই গাজার শিশুদের ওপর বোমা ফেলা হচ্ছে’। সূত্র: আল-মায়াদিন ও মেহের নিউজ এজেন্সি