সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

আ.লীগ নিয়ে স্ট্যাটাস, ১০ বছরের সাজা খাটছেন হাফেজ মুকিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৬ প্রদর্শন করেছেন

‘আওয়ামী লীগ’ নিয়ে ফেসবুকে কাল্পনিক কথোপকথন পোস্ট করার পর ১৭ বছর বয়সি হাফেজ আব্দুল মুকিতের বিরুদ্ধে মামলা করেন আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান বাদল। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় এ মামলা করা হয় এবং মুকিতকে গ্রেফতার করে তিন মাস কারাবন্দি রাখা হয়।

২০২২ সালে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুকিতকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেন। তার বিরুদ্ধে এ রায়ের পর থেকে তিনি জেল খাটছেন।

মুকিতের জামিনের আবেদন করলে উচ্চ আদালত তাকে জামিন দিলেও তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিনের আপত্তিতে চেম্বার জজ আদালত তা স্থগিত করেন।

মামলার এ পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে, যা বাংলাদেশের আইন এবং বাক স্বাধীনতার সীমানা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

মুকিতের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুরে। শ্রমজীবী রিয়াজুল ইসলাম ও আশরাফুন নেসা দম্পতির পাঁচ মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে আব্দুল মুকিত। মেয়েদের মধ্যে দুজন বিবাহিত। এ ছাড়া মুকিতের বড় রাদিয়া ফেরদৌস পড়েন বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে। তার ছোট বোন রাকিবা পড়ছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সবার ছোট সুমাইয়া আক্তার পড়ছেন রাজশাহী সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে।

ভাইবোনরা সবাই মেধাবী। তবে দরিদ্র বাবার পক্ষে পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। তাই হাফেজ হওয়ার পর থেকেই প্রাইভেট পড়াতেন মুকিত। নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি বোনদের খরচও দিতেন। কিন্তু খোলাবোনা মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০১৭ সালের ২৭ মে ফেসবুকে বাবা-ছেলের কাল্পনিক কথোপকথন নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। এতে লেখেন- আইয়াম শব্দ থেকে এসেছে আওয়ামী, অর্থাৎ অন্ধকার। আর ‘লীগ’ অর্থ দল। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ অর্থ অন্ধকারের দল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরদিন হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার সাইদুর রহমান বাদল আইসিটি আইনে পবা থানায় মুকিতের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।

এর মধ্যে জেল থেকেই পরীক্ষা দিয়ে হাফেজ মুকিত পাস করেন ফাজিল (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর)। গত ৩ অক্টোবর তার কামিল পরীক্ষার ফল বের হয়। তিনি জিপিএ-৩.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইসিটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু হাফেজ মুকিতের মুক্তি বা জামিন মেলেনি।

হরিপুরে মুকিতদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তার প্রাইভেট পড়ানোর কক্ষে এখনো বেঞ্চ পাতানো আছে। পড়ার টেবিলে বইয়ে ঠাসা। মুকিতের মা আশরাফুন নেসা কারাবন্দি ছেলের কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, সরকার পতনের পর মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি অনেকেই মুক্তি পেলেও আমার ছেলের মুক্তি মিলছে না। ছেলেকে এ মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাই।

মুকিতের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকের পোস্টটি মুকিতের নয়। অথচ তিনি মিথ্যা মামলায় সাজাভোগ করছেন। সাজার সময় তার বয়সও বিবেচনা করা হয়নি। এমনকি বাদী এবং সাক্ষীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, রায়ের ক্ষেত্রে সেগুলোও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে ২০২৩ সালে জামিনাদেশ হয়। কিন্তু তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিনের আপত্তির কারণে চেম্বার জজ আদালত জামিনাদেশ স্থগিত করেন। ফলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সেই স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে বলে। পরবর্তীতে আপীল নিষ্পত্তি না করেই গত ২ সেপ্টেম্বর পুনরায় তার জামিন দেওয়া হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পুনরায় তার জামিন বাতিল করেন। ফলে এখনও মুকিত কারাগারে আছেন। জামিনও পাননি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাডভোকেট ইসমত আরা কোনো কথা বলতে চাননি। উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের পর বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা বাদল।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ