সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ন

হেলিকপ্টারে চড়ে অনুষ্ঠানস্থলে, ফের আলোচনায় মান্নানপুত্র রনি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩৮ প্রদর্শন করেছেন

গাজীপুরে হেলিকপ্টারে একটি খেলার অনুষ্ঠানে এসে আবারো আলোচনায় মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মান্নানপুত্র মঞ্জুরুল করীম রনি। গত শনিবার হেলিকপ্টারে চড়ে তিনি একটি ক্রীড়ানুষ্ঠানে যোগ দেন। এর আগে দলের প্রাথমিক সদস্য না হয়েও সরাসরি মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।

জানা গেছে, গত শনিবার বিকালে নগরীর সালনা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গাজীপুর প্রিমিয়ার লীগের ফাইনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের পুত্র এম মঞ্জুরুল করীম রনি। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি শনিবার বিকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে সালনা স্কুল মাঠে অবতরণ করেন। এ সময় তাকে দলীয় নেতাকর্মীরা অভ্যর্থনা দেন এবং তার সঙ্গে সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন।

 

পরে ওই ছবি মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। আবার অনুষ্ঠান শেষে হেলিকপ্টারে তিনি গাজীপুরে আরও কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেন। হেলিকপ্টারে চড়ে এলাকায় এমন মহড়ার ঘটনাটি পক্ষ-বিপক্ষ ও সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম হয়ে উঠছে। পিতা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের মৃত্যুর পর ব্যাংক খেলাপি ঋণের ভারে রনি দেওয়ানি হয়ে পড়েন। ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে সহায়-সম্পদ বিক্রি করে দেন। কিন্তু গত ৫ আগস্টের গণবিপ্লবে ভাগ্য খুলে যায়। অল্প দিনের ব্যবধানে তার চাল-চলনে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দেয়। চার শত কোটি টকার ব্যাংক লোনের মধ্যে ইতিমধ্যেই একশত কোটি টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন বলেও তার ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন। তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে তিনি এখনো ওই ঋণের কোনো টাকা পরিশোধ করতে পারেননি।

 

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, দলের ভাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতাদের বার্তা দিচ্ছেন মানুষের আস্থা অর্জনের ‘মুই কী হনুরে’ না ভাবতে। এমনকি তারেক রহমান নিজের জন্মদিন পালনের আনন্দ করতেও নিষেধ করেন, গাড়ি বহর, হোন্ডা বহর নিষেধ করেছেন, তাকে দেশনায়ক বলতে মানা করেছেন। আর গাজীপুর মহানগরের বিএনপি নেতা বাহাদুরি দেখাচ্ছেন। মনে হয় তিনি ক্ষমতার উচ্চ শিখরে বসে গেছেন।

 

গাজীপুরে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আরিফ হোসেন বলেন, জমি দখল, চাঁদাবাজি, কাঁচাবাজার দখল নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে, কারখানার ঝুট ব্যবসা দখল নিয়ে ২২টি হোন্ডা পুড়িয়ে দিয়েছে। দখলবাজি নিয়ে দাওয়া পাল্টা দাওয়ার ঘটনা নিত্যদিনের।

 

বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. মাজহারুল আলম বলেন, এতো অহমিকা ভাল না, আমাদের নেতাতো এগুলো চায়না। দলের সঙ্গে যেগুলো যায় না, ওই কাজ গুলো করতে আমাদের নেতা নিষেধ করে দিয়েছেন। যেমন হুন্ডা মিছিল বা গাড়ির বহর, আমাদের নেতা তার জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে পর্যন্ত নিষেধ করে দিয়েছিলেন। আমাদের নেতাতো ওনাকে দেশ নায়ক বলতেও নিষেধ করেছেন।

 

দলের প্রাথমিক সদস্য না হয়েও সরাসরি মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক: গত ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর গাজীপুর মহানগর বিএনপির ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে সোহরাব হোসেনকে আহ্বায়ক ও শওকত হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করা হয়। মঞ্জুরুল করিমকে করা হয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক। ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর সোহরাব হোসেন মারা যান। এরপর ২২ ডিসেম্বর মঞ্জুরুল করিমকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। তখন পদবঞ্চিতদের অভিযোগ ছিল, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে মঞ্জুরুল করিম রনিকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে। পরে ২০২৩ সালের জুনে শওকত হোসেন সরকারকে সভাপতি ও মঞ্জুরুল করিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। বর্তমানে এঅবস্থাতেই গাজীপুর মহানগর বিএনপির কার্যক্রম চলছে। অভিযোগ আছে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে নিজস্ব নেতা-কর্মীদের পদ দিয়ে নগরীর ৮ থানায় বিএনপির ত্যাগীদের বঞ্চিত করে কমিটি গঠন করেছেন।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করীম রনির মোবাইলে একাধিকবার কল করে বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

 

এবিষয়ে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার বলেন, বিষয়টি ফেজবুকে ভাইরাল হয়েছে এটি আমিও দেখেছি। এনিয়ে আমি নতুন করে কি বলবো, আমাদের দলের মাননীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানইতো বলছেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ