বাংলাদেশের সঙ্গে সদ্য প্রয়াত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ নিরসনে তিনি যেমন কাজ করেছেন, তেমনি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারসহ নানা ইস্যুতে তার ছিল উচ্চকণ্ঠ। বাংলাদেশের যে কোনো সংকটে তিনি উপস্থিত হয়েছেন শান্তির বার্তা নিয়ে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তাকে জিমি কার্টার হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানান। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল। অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কার্টার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন হোয়াইট হাউজে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে জিয়াউর রহমান যান হোয়াইট হাউজে।
দুই নেতা বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে অন্তরঙ্গ আলোচনা করেছিলেন এবং যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাবও দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানকে কার্টার সম্বোধন করেছিলেন একজন চমৎকার নেতা হিসেবে। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অভাবনীয় উন্নতি করেছে বলেও জিমি কার্টার সায় দেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং জিমি কার্টারের মধ্যে আলোচ্য বিষয় ছিল বাংলাদেশের আমেরিকার সাহায্য নিয়ে। এর আগের বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৮৪ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দিয়েছিল। সে বছর বাংলাদেশ দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল।
এরপর ১৯৮৬ সালে জিমি কার্টার দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। কার্টার এবং তার স্ত্রী রোজালিন ঢাকা আসলে বিমানবন্দরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী তাকে স্বাগত জানান। এই সফরে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়াও কার্টার কিছু উন্নয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গ্রামীণ স্বাস্থ্য প্রকল্পের উদ্বোধন। সেই সফরে তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে নৌবিহারেও যোগ দেন।
বাংলাদেশে জিমি কার্টারের সর্বশেষ সফর ছিল ২০০১ সালে। এখানে আসেন তিনি কার্টার সেন্টারের পক্ষ হয়ে। সে সময় তিনি একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপায় খুঁজে বের করতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।