রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১২ পূর্বাহ্ন

যে কারণে জামিন পেলেন না চিন্ময় কৃষ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৩ প্রদর্শন করেছেন

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন জজ আদালতেও নাকচ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলাম এ আদেশ দেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পিপি মফিদুল হক ভূইয়া যুগান্তরকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে চিন্ময় দাসের ভার্চুয়াল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মফিজুল হক ভূইয়া যুক্তি তুলে ধরেন যে, ‘রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা জামিন অযোগ্য, ফলে চিন্ময় দাসের জামিন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এরপর শুনানি শেষে চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেয় আদালত।

সাবেক ইসকন নেতার জামিন শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন ১১ জন আইনজীবীর একটি দল।

ওই দলের একজন সদস্য সুমন কুমার রায় বলেছেন, আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, এটি একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা যার শাস্তি সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন এবং মামলাটি যেহেতু তদন্তাধীন, এক্ষেত্রে তারা জামিনের বিরোধিতা করছেন। এবং জামিন না দিতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে প্রার্থনা করেছে।

শুনানিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবীরা বলেছেন, তার বিরুদ্ধে পতাকা অবমাননার অভিযোগে যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন।

সুমন কুমার রায় বলেন, প্রথমত, সমাবেশের ভিডিওতে ইসকনের পতাকার নিচে যে পতাকাটি ওড়ানো হয়েছে, সেটি আসলে চাঁদ তারা খচিত পতাকা। অর্থাৎ সেটা বাংলাদেশের পতাকা না।সেইসঙ্গে পতাকা অবমাননার কোনো ধারা বাদী মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করেননি এবং যে পতাকাটি অবমাননার কথা বলা হয়েছে সেটাও জব্দ তালিকায় নাই।

তার যুক্তি এর ফলে অভিযোগ যথাযথভাবে প্রমাণ হচ্ছে না।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন নেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি।

সুমন কুমার রায় বলেন, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করতে পারেন না। এ ধরনের মামলা আমলে নেয়ারও কোনো এখতিয়ার নাই। সব মিলিয়ে মামলায় পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। তার মানে এই মামলা ভিত্তিহীন। এমন অবস্থায় চিন্ময়কৃষ্ণ তার জামিন পাওয়ার হকদার।

জামিন আবেদনের শুনানিতে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীরা বলেছেন, তার নির্দিষ্ট ঠিকানা আছে, তাই জামিন পেলে তার পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। সেক্ষেত্রে আমরা নিয়মিতভাবে ট্রায়াল ফেইস করব।

তবে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে চিন্ময় দাসের জামিন নামঞ্জুরের আদেশ হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন এই আইনজীবী।

গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করে। পরদিন কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদোহ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে মহানগর ষষ্ঠ কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়।

আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এটি নিয়ে বিক্ষোভ করেন ইসকন অনুসারীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা।

দুপুর পর বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে আদালত এলাকায় মসজিদ-দোকানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়।

একপর্যায়ে বিকালে আদালতের প্রধান ফটকের বিপরীতে রঙ্গম কনভেনশন হলের গলিতে একদল ইসকন অনুসারীর হাতে খুন হন অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় আরও কয়েকটি মামলা দায়ের হয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ