শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর গুলি খেয়ে নাদিম এখন ঘরের বোঝা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৮ প্রদর্শন করেছেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর গুলি খাইছি। এখন আমি ঘরের বোঝা। গুলি খাওয়ার পর থেকে কোনো কাজ করতে পারি না। হাসপাতাল থেকেও বাসায় যাইতে মনে চায় না। ঘরে কিভাবে মুখ দেখাব আমাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। আমার ভাই গার্মেন্টে চাকরি করে ১২ হাজার টাকা বেতন পায়। তার এ আয় দিয়ে সংসারই ঠিকমতো চালানো যায় না।

কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া ২০ বছর বয়সি অটোরিকশাচালক মো. নাদিম। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার ঐক্যের বিপ্লবে অন্যদের মতো নাদিমও ১৭ জুলাই হতে ১৯ জুলাই পর্যন্ত নিয়মিত মিছিলে যোগ দিয়েছেন। ২০ জুলাই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশে যাওয়ার পথে অতর্কিত বিজিবির গুলিবর্ষণের শিকার হন নাদিম। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে ৭টি গুলি লাগে।

ঝালকাঠির নলছিটি থানার মৃত খোকা হাওলাদারের ছেলে নাদিম বাবার মৃত্যুর পর থেকেই সংসারের হাল ধরতে পড়াশোনা বাদ দেন। অটোরিকশা চালিয়ে উপার্জিত আয় দিয়েই পরিবারের সঙ্গে তিনি কোনোরকমে জীবনযাপন করে যাচ্ছিলেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে নাদিম তার মা ও এক ভাইকে নিয়ে (নাসিক) ১নং ওয়ার্ডের একটি বাড়িতে ভাড়াটে হিসাবে বসবাস করতেন। আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে অটোরিকশা বিক্রি করেছেন। তাতেও তার চিকিৎসা হয়নি। বাধ্য হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে এখন তিনি দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন।

২০ জুলাইয়ের স্মৃতি মনে করে নাদিম বলেন, আমি অন্যান্য দিনের মতো ওই দিন সকালে আন্দোলনে গিয়েছিলাম। দুপুরে খাবার খেতে বাসায় এসেছিলাম। ১৭ জুলাই থেকেই আমাদের সঙ্গে প্রশাসনের সঙ্গে ধাওয়া-পালটাধাওয়া হচ্ছিল। আমি ২০ জুলাই বিকালে আন্দোলনে যাওয়ার জন্যে চিটাগাং রোড যাচ্ছিলাম, এমতাবস্থায় বিজিবি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ করে অতর্কিতভাবে গুলি চালানো শুরু করে। আমি বাঁচার জন্যে পালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা আমাদের গুলি করতে করতে পেছনে আসছিল। পুলের কবরস্থান মসজিদের সামনে আসার পরই আমি একের পর এক গুলি খাই। গুলি খেয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। আমার শরীরে মোট ৭টা গুলি লেগেছিল।

নাদিম আরও বলেন, সেদিন আশপাশের মানুষ আমাকে বাসায় নিয়ে গেলে, আমার ভাই-খালু সাইনবোর্ড প্রোঅ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে শুধু সাময়িক চিকিৎসা করেই চিকিৎসকরা আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। এরপর আরও দুটি হাসপাতালে ঘুরে অপারেশন করাই। অপারেশনের পর প্রায় ১০-১২ দিন বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলাম। তখন শুনেছি পুলিশ আহতদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এই ভয়ে আমিও তখন পালিয়ে আত্মীয়ের বাসায় যাই। এরপর থেকে সরকারের সহায়তায় আমাদের চিকিৎসা চলছে। তবে উন্নত চিকিৎসা আমরা পাচ্ছি না। আমি হাত দিয়ে কিছুই করতে পারছি না। অচল হয়ে আছে। এর মধ্যে কিছুদিন আগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আমাদের ১ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। মূল কথা আমি এখন হাসপাতাল থেকে বাড়িতেও তেমন আসি না। পরিবারের কথা মনে পড়লে তাদের সঙ্গে দেখা করতে আসি।

নাদিমের বড় বোন নাসরিন বলেন, আমার ভাইটা গুলি খাওয়ার পর রিকশা বিক্রি করার পাশাপাশি আরও ঋণ কইরা ওর চিকিৎসা করছি। এখন ঋণের বোঝা টানতে কষ্ট হচ্ছে। আমার মায়ের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। সরকারের কাছে দাবি জানাই আমার ভাইকে যেন উন্নত চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলে। ওর আয় ছাড়া আমাদের সংসার চলবে না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ