দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের জব্দ হওয়া ১২৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫ কোটি টাকার সন্ধান মিলেছে। এছাড়া ইউরোপ-আমেরিকাসহ পাঁচ দেশে বিপুল সম্পদ পাওয়া গেছে। আর অর্থ পাচারের জন্য প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত হওয়া ১১টি ঘটনার মধ্যে অধিকাংশই হাসিনা ও তার পরিবারের।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত বৈঠকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। পরে এসব তথ্য প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
সোমবারের বৈঠকে বিএফআইইউ জানায়- শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জব্দ করা ১২৪ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬৩৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা পেয়েছে বিএফআইইউ। এছাড়া ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা দলিলমূল্যে রাজউকের ৬০ কাঠা প্লট এবং ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমিসহ আটটি ফ্ল্যাট অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার একটি অ্যাকাউন্টে রাশিয়ান ‘স্নাশ ফান্ড’-এর অস্তিত্বও মিলেছে। হাসিনা পরিবার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া ৬টি মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে এবং পরিবারের ৭ সদস্যকে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, কতটা বেপরোয়াভাবে পাচার করা হয়েছে, তা দু-একটি উদাহরণে বোঝা যায়। একজন শিক্ষার্থীর টিউশন ফি হিসাবে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাচারের অর্থ উদ্ধার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বিএফআইইউ প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উল্লেখ করা হয়, আর্থিক খাতে জালিয়াতি, দুর্নীতিসহ সরকারি চুক্তিতে অনিয়মের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে ৭৫ বিলিয়ন থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব অর্থ প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকংসহ অন্যান্য ট্যাক্সহেভেন অফশোর (পাচারকারীদের নিরাপদ স্থান) দেশগুলোতে পাচার হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, ‘টাকা পাচার ইস্যুতে ১১টি কোম্পানি ও স্বতন্ত্র ব্যক্তি নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। এই তালিকায় প্রথমেই আছেন শেখ হাসিনা ও তার পরিবার। পাচারকারীরা নানাভাবে বিদেশে টাকা পাচার করেছে।’