ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে সোমবার শোনা গেল তীব্র সতর্কবার্তা। বিশেষ ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর প্রক্রিয়ায় যদি সামান্যও বেআইনি প্রমাণিত হয়, তবে গোটা প্রক্রিয়াই বাতিল হয়ে যাবে।
বিচারপতি সূর্য কান্তের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। কারণ শুধু বিহার নয়, পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা দেশে এসআইআর নিয়ে মামলা করা হয়েছে। আর আদালত জানিয়েছে, রায় গোটা দেশেই প্রযোজ্য হবে।
এর ফলে একদিকে কমিশনের উপর চাপ বেড়েছে, অন্যদিকে বিরোধী শিবির পেয়েছে নতুন করে উৎসাহ।
আদালতে মূল আবেদনকারী সংস্থা এডিআর এবং তাদের পক্ষে থাকা ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, যোগেন্দ্র যাদবরা বলেছেন, সেপ্টেম্বরের শেষে কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে, অক্টোবরে নির্বাচনসূচি ঘোষণা হবে, নভেম্বরে সরকার গঠন করতে হবে।
এমন অবস্থায় যদি এসআইআরের বৈধতা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দ্রুত শুনানি ও রায়ের দাবি জানানো হয়।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, চূড়ান্ত শুনানি ৭–৮ অক্টোবর হবে। আর সেদিনই নির্ধারিত হবে এসআইআরের ভবিষ্যৎ। আদালতের এই সিদ্ধান্তকে বিরোধীরা নিজেদের আন্দোলনের সাফল্য হিসেবে দেখছে। তাদের মতে, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে বিরোধীরা নির্বাচনী সংস্কারের জন্য ধারাবাহিক চাপ তৈরি করেছিল, আর সেই চাপই আদালতের মন্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, বিজেপি ভেবেছিল বিরোধীদের আন্দোলন নিছক রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু আদালত যখন বলছে বেআইনি কিছু দেখলেই প্রক্রিয়া বাতিল, তখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বিরোধীদের দাবি ভিত্তিহীন নয়।
কমিশনের ভূমিকা নিয়েও আদালত প্রশ্ন তুলেছে। ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন এসআইআরের অগ্রগতি নিয়ে বুলেটিন প্রকাশ করা হলেও তারপর আর তা হয়নি। আদালত সরাসরি জানতে চেয়েছে, আগে যখন সম্ভব হয়েছে এখন কেন হচ্ছে না।
কমিশনের আইনজীবী বলেছেন, প্রতিদিন এত তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। বিচারপতি বাগচীর পাল্টা প্রশ্ন, তাহলে আগে কীভাবে সম্ভব হয়েছিল। এই বিতর্ক কমিশনের প্রতি সন্দেহ আরও গভীর করেছে।
এসআইআরে আধার গ্রহণযোগ্য কি না, সে নিয়েও আদালতে বিতর্ক ওঠে। আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেন, আধার নাগরিকত্ব বা জন্মতারিখ প্রমাণ করে না, তাই গ্রহণযোগ্য নয়। আদালত সেই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে জানায়, আধার নথি হিসেবে দেখানো যাবে। বিচারপতির মন্তব্য ছিল পরিষ্কার—যদি নকলের যুক্তি ওঠে তবে পাসপোর্ট বা জন্ম সনদও নকল হতে পারে।
বিরোধী পক্ষের দাবি, কমিশন নিয়ম ভঙ্গ করছে। অভিযোগগুলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। প্রশান্ত ভূষণ আদালতে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। বিচারপতি সূর্য কান্তের বক্তব্য তখনই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—কমিশন সাংবিধানিক সংস্থা হলেও বেআইনি কিছু প্রমাণিত হলে প্রক্রিয়া বাতিল করা হবে। এই সতর্কবার্তা বিরোধীদের বক্তব্যকে আরও ওজন দিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আদালতের এই অবস্থান কি বিজেপিকে কোণঠাসা করে তুলবে। বিরোধীরা মনে করছে, আদালত এবার তাদের দাবিকে স্বীকৃতি দিল। রাহুল গান্ধীর আন্দোলন বিজেপি সরকারকে চাপে ফেলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আদালত বলছে, পুরো প্রক্রিয়া বাতিলও হতে পারে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিরোধী ঐক্যের জন্য এ এক বড় প্রাপ্তি।
ক্ষমতাসীন শিবির অবশ্য বলছে, আদালত কমিশনের সাংবিধানিক অবস্থানকে রক্ষা করেছে। তারা বিশ্বাস করে, কমিশন নিয়ম মেনেই কাজ করছে। কিন্তু বাস্তব হলো, আদালত যখন নিয়ম লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দিল, তখন শাসক দলের ওপর চাপ বাড়বেই। নির্বাচনের আগে এমন অনিশ্চয়তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন জটিল। যদি ৭–৮ অক্টোবর আদালত সত্যিই প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়, তবে নির্বাচনের সময়সূচি, ফলাফল, এমনকি সরকার গঠন সবকিছুতেই প্রভাব পড়বে। বিরোধীরা মনে করছে, এর ফলে বিজেপি বড় ধাক্কা খাবে। আর আদালতের হুঁশিয়ারি সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। রাহুল গান্ধীর আন্দোলন তাই এবার যেন আদালতের কক্ষে পৌঁছে গেছে। এখন কেবল অপেক্ষা রায়ের।