নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য চারই আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির আহ্বায়ক ও জুলাই অভ্যুত্থানের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষী দেয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “তেসরা আগস্ট যেহেতু সরকার পতনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি একদফা, ফলে এই সরকারকে আমরা আর মেনে নিচ্ছি না। আমাদের একজন নতুন সরকার প্রধানের জন্য তখন থেকেই পরিকল্পনা হচ্ছিল।”
সেই প্রেক্ষাপটেই আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রাথমিকভাবে ভেবে নিয়েছিলাম, অন্য আরো অনেকের সাথে পরামর্শ করে। এজন্য আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করি।
এর আগে সকাল সোয়া ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১।
সংবাদ সম্মেলনে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে সমন্বয়কদের কীভাবে জোর করে আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল সেসব বিষয় নিয়েও কথা বলেন তিনি।
জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি অভিহিত করে কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। মূলত এই বক্তব্যের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণের একটি বৈধতা প্রদান করা হয়। কারণ, তারা সব সময় দেখেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন করা হলে তাদের রাজাকারের বাচ্চা আখ্যা দিয়ে আন্দোলনের ন্যায্যতা নস্যাৎ করা হতো। ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি আখ্যায়িত করায় সারা দেশের ছাত্রছাত্রীরা সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় নেমে আসেন।
গত বছরের ১৭ জুলাই ডিজিএফআই তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করার এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপের জন্য চাপ দেয় বলেও উলেখ করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দেওয়া হয়। সারা দেশেই এ ধরনের বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। সব বাধা অতিক্রম করে তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখেন।
নাহিদ ইসলাম জানান, গত বছরের ১৭ জুলাই রাতে তারা দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন (১৮ জুলাই) সারা দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা সেদিন রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আন্দোলনের নেতাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং গ্রেফতার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে যান। সেদিন সারা দেশে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন। সেদিন রাতে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে অনেক ছাত্র-জনতা আহত ও শহীদ হন।