বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন

ইউএনওর বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার কাছ থেকে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২ প্রদর্শন করেছেন
শরীয়তপুরে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাইয়ুম খানের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের ঘুস আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম মতিউর রহমান সাগর। তিনি নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার ইউনিয়নের লাউলানী গ্রামের অধিবাসী এবং তিনি দীর্ঘদিন যাবত নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন- বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট।
নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগরের লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আব্দুল কাউয়ুম খান নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করার কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসায়ী ও নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর ঘড়িসার ইউনিয়নের নোয়াদ্দা বাংলাবাজারে যথাযথ বিধি-বিধান অনুসরণ করে একটি ওয়াস ব্লক নির্মাণ করেন। ওই কাজের বিল তুলতে গেলে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল কাইয়ুম খান ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মতিউর রহমান সাগরের কাছে অফিস খরচ বাবদ ৮% হারে টাকা দাবি করেন।
এ সময় মতিউর রহমান সাগর তার চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উভয়ের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এতে ইউএনও আব্দুল কাউয়ুম খান ক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন প্রকার আইন-কানুনের ভয় দেখিয়ে মতিউর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি প্রদান করেন। এরপর ২০ আগস্ট মতিউর রহমান সাগর ব্যবসায়িক কাজে বিদেশে অবস্থান করলে তার কর্মচারী বিল্লাল হোসেন সরকারি ও এমএসের চাল বিতরণ করেন।
এ সময় ইউএনও আব্দুল কাউয়ুম খান ওএমএসের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে মতিউর রহমান সাগরকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন। মতিউর রহমান সাগর ২৩ আগস্ট ২০২৫  উক্ত কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব প্রদান করেন; কিন্তু এতে ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খান সন্তুষ্ট হননি বলে মতিউর রহমান সাগর জানান।
পরবর্তীতে ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খান এবং উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে মতিউর রহমান সাগরের কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। ওই টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করলে ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খান ক্ষিপ্ত হয়ে ২৮ আগস্ট ২০২৫ মতিউর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের করার জন্য একটি চিঠি ইস্যু করেন যা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম ব্যবসায়ী মতিউর রহমান সাগরের হোয়াটসঅ্যাপে প্রেরণ করেন।
এরপর কিছুটা ভীত হয়ে মানসম্মানের কথা চিন্তা করে একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় মতিউর রহমান সাগর ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খানের সঙ্গে দেখা করেন এবং উপজেলা পুকুরঘাটের সামনে খামে ভরে ইউএনও আব্দুল কাইয়ুম খানকে ২ লাখ টাকা দিয়ে আসেন। বাকি ৩ লাখ টাকা আর দিতে পারবেন না বলে জানান মতিউর রহমান।
বাকি টাকা দেওয়ার জন্য মতিউর রহমানকে চাপ প্রয়োগ করেন। দর কষাকষির পর আর এক লাখ টাকা দেওয়ার জন্য মতিউর রহমানের কাছে দাবি জানান ইউএনও। কিন্তু উক্ত টাকা না দেওয়ার কারণে ১১ দিন পর মতিউর রহমানের অনুপস্থিতে ৭-৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে মতিউর রহমানের গোডাউনে হানা দেন ইউএনও এবং ৩৫৫ কেজি চাল কম আছে অজুহাত দেখিয়ে মতিউর রহমানকে ৪১ হাজার ৪০৬ টাকা জরিমানা করেন। তার খাদ্যবান্ধব ডিলার লাইসেন্সটি স্থগিত করে দেন।
এ ঘটনায় নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খানের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয় সুশীল সমাজসহ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নড়িয়া উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামকে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, যে দিন সন্ধ্যা ৭টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেদিন আমি নড়িয়া উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় ছিলাম। সেই বিষয়টি সিসিটিভির ফুটেজ আছে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, আমি এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাই এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ