কক্সবাজারের টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) কর্তৃক নাফ নদীতে শ্বাসরুদ্ধকর নৌ-অভিযানে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ ০৩ রোহিঙ্গা পাচারকারী আটক
দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিজিবি) এর টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) আরও একটি দুঃসাহসিক ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। গত ২০ অক্টোবর দিবাগত রাতে টেকনাফের নাফ নদীর জলসীমায় পরিচালিত এই শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে প্রায় ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) পিস) ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছে এবং মাদক পাচারের দায়ে ০৩ জন মায়ানমারের নাগরিককে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে।
দীর্ঘদিনের নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে এবং সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ড রুখতে সার্বক্ষণিক সতর্কতার অংশ হিসেবে, ২০ অক্টোবর রাতে ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ সাবরাং বিওপি’র (বর্ডার আউটপোস্ট) দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়। গভীর রাতে বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে মায়ানমারের মংডু খাল থেকে একটি সন্দেহজনক নৌকার গতিবিধি শনাক্ত করা হয়। সাথে সাথেই নাফ নদীতে ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের নেতৃত্বে দ্রুত দুইটি দ্রুতগতির অত্যাধুনিক নৌযান মোতায়েন করে কৌশলগত ‘ফাঁদ’ পাতা হয়। নৌকাটি যখন রাতের নিকষ আঁধারের আড়ালে মায়ানমারের জলসীমা অতিক্রম করে শূন্যরেখার কাছাকাছি বাংলাদেশের দিকে আসছিল, তখন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অপরাধীদের নৌকাটিকে মাঝ নদীতে ঘিরে ফেলা হয়। রাতের অন্ধকারেও সীমান্ত রক্ষীরা দ্রুত অভিযান পরিচালনার ফলে ০১টি হস্তচালিত কাঠের নৌকা আটক করে তল্লাশীর পর নৌকার ভেতর বিশেষভাবে লুকানো ৪টি পানি নিরোধক প্যাকেট থেকে মোট ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও, মাদক পাচারকারীরা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতারে পালানোর চেষ্টা করলেও তাদেরকে নদীতে খুঁজে বের করে আটক করা হয়। মাদক বহনের দায়ে ঘটনাস্থল থেকে নিম্নোক্ত ০৩ জন রোহিঙ্গা (এফডিএমএন)
সদস্যকে আটক করা হয়েছেঃ
আব্দুল হাফেজ (১৮), পিতা-মৃত শুক্কুর, ২১ নং চাকমারকুল এফডিএমএন ক্যাম্প, ব্লক-এ-৬।
রবি আলম (২৩), পিতা- মোঃ নুর আলম, ১০নং বালুখালী এফডিএমএন ক্যাম্প, ব্লক-এ-৪৫।
রেজু আলম(১৯), পিতা-মৃত আমির হোসেন, ১৬ নং ময়নারঘোনা এফডিএমএন ক্যাম্প, ব্লক-২৪ এ/৫।
অভিযানের পরে, টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি জানান যে, বিজিবি’র আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি ব্যবস্থা এবং পেশাদারিত্বের কারণে জলসীমা ব্যবহার করে মাদক ও মানব পাচারসহ আন্তঃরাষ্ট্রীয় সীমান্ত অপরাধ সফলভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে। এই অভিযান সীমান্তে বিজিবি’র দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা সর্বস্তরের জনগণের নিকট প্রশংসিত ও স্বীকৃত। তিনি জোর দিয়ে আরও বলেন যে, “এফডিএমএন পরিচয়ে যারা ক্যাম্পের বাইরে অবৈধভাবে অবস্থান করছে অথবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।”
দেশের সীমান্ত সুরক্ষা ও মাদকের করাল গ্রাস থেকে তরুণ সমাজকে বাঁচাতে বিজিবি সর্বদা সতর্ক ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে এবং এই জিরো টলারেন্স নীতিতে অবিচল থাকবে।
আটককৃত আসামি ও জব্দকৃত মাদকদ্রব্য (ইয়াবা ট্যাবলেট-৪০,০০০ পিস, হস্তচালিত কাঠের নৌকা-০১টি) যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।