শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৯ পূর্বাহ্ন

করপোরেট দুনিয়ার আইকন থেকে রুপালি পর্দার রানি

বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৬ প্রদর্শন করেছেন

বলিউড অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়া সম্প্রতি পুত্রসন্তানের মা হয়েছেন। দিল্লির একটি বেসরকারি হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। বর্তমানে মা ও নবজাতক দুজনেই সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে। আজ এ প্রতিভাবান অভিনেত্রীর জন্মদিন। কিন্তু তার জীবন সংগ্রাম-লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।

দেশি গার্ল অভিনেত্রী প্রিয়াংকা চোপড়ার খুড়তুতো বোন পরিণীতি চোপড়া একসময় অফিসের ডেস্কে বসে কাগজপত্রের হিসাব করতেন, আজ সেই নারী তার অভিনয়ের জাদু দিয়ে হাজারো দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। পরিণীতি চোপড়া-যিনি একসময় করপোরেট দুনিয়ার পেশাদার ছিলেন, কিন্তু ভাগ্য একদিন তাকে টেনে নেয় একেবারে অন্য মঞ্চে— রুপালি পর্দার আলোয়।

ব্যর্থতা আর অনিশ্চয়তা এবং ভাঙা স্বপ্ন পেরিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, জীবনের আসল শক্তি লুকিয়ে থাকে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখায়। তার গল্প শুধু সফল এক অভিনেত্রীর নয়, বরং এক অনুপ্রেরণাদায়ী নারীর, যিনি প্রমাণ করেছেন— পথ বদলালেও লক্ষ্য হারায় না, যদি সাহস থাকে নতুন করে শুরু করার।

জীবনের গল্প যেন এক অসম্পূর্ণ স্বপ্নের ভেতর থেকেও নতুন করে উঠে দাঁড়ানোর প্রতীক। কখনো করপোরেট অফিসের চাকরিজীবী, কখনো পর্দার সামনে এক আত্মবিশ্বাসী নারী পরিণীতি প্রমাণ করেছেন— ভাগ্য নয়, নিজের সিদ্ধান্তই মানুষকে গড়ে তোলে।

যশরাজ ফিল্মসে জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি শুরু করেন পরিণীতি চোপড়া। ভাগ্যের চাকা তখন ঘুরতে শুরু করেছে— অভিনয়ের প্রতি গভীর আগ্রহ জন্ম নেয় তার ভেতরে। পরিচালক আদিত্য চোপড়ার নজরে আসার পর ২০১১ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমা ‘লেডিজ ভার্সেস রিকি বাহল’। পার্শ্বচরিত্র হলেও তার উপস্থিতি ছিল এমন প্রাণবন্ত যে, দর্শক ও সমালোচক সবাই তাকিয়ে দেখেছিলেন এক নতুন প্রতিভাকে। পরের বছরই ‘ইশকজাদে’ সিনেমায় জয়া চরিত্রে অভিনয় করে পরিণীতি পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিশেষ স্বীকৃতি। শক্ত সংলাপ, সাহসী চরিত্র আর স্বাভাবিক অভিনয় তাকে বলিউডে আলাদা পরিচিতি এনে দেয়। তিনি শুধু নায়িকা নন-একজন শিল্পী, যিনি চরিত্রের ভেতরে ডুবে যান নিঃস্বার্থভাবে।

তবে তার জীবনের চলার পথ মসৃণ ছিল না। কয়েকটি সিনেমার ব্যর্থতা তার ক্যারিয়ারে ধাক্কা আনলেও পরিণীতি হার মানেননি। বরং নিজেকে নতুনভাবে গড়েছেন। ওজন কমিয়েছেন, ফিটনেসে মনোযোগ দিয়েছেন, নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছেন। এর ফল ‘গোলমাল এগেইন’, ‘সন্দীপ অউর পিঙ্কি ফারার’ ও ‘সাইনা’-এর মতো সিনেমায় তার পুনর্জন্ম।

পরিণীতি যেমন আত্মবিশ্বাসী, ঠিক তেমনি বাস্তবজীবনেও তিনি হয়ে উঠেছেন এক সাহসী নারী। নিজের মতপ্রকাশে খোলামেলা, ফ্যাশনে মার্জিত আধুনিক আর আচরণে সহজ ও মিষ্টি। রেড কার্পেট থেকে ইনস্টাগ্রাম— সব জায়গায়ই নিজের উপস্থিতি জানান দেন ব্যক্তিত্বের দীপ্তিতে। জীবনের প্রতিটি বাঁকে তিনি দেখিয়েছেন, সাফল্য মানে কেবল আলো নয়, বরং ব্যর্থতার ভেতর থেকে আলো খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতা। পরিণীতি চোপড়া আজ শুধুই এক তারকা নন, তিনি এক অনুপ্রেরণা, এক প্রমাণ যে ভাঙা স্বপ্নের ভেতরেও জন্ম নিতে পারে নতুন আলো।

উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালের এই দিনে ভারতের হরিয়ানার অ্যাম্বালায় পরিণীতি চোপড়ার জন্ম। স্নেহময়, শিক্ষিত ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা এই মেয়েটির জীবনের লক্ষ্য প্রথমে সিনেমা ছিল না।  ছিল অর্থনীতির জগতে জায়গা করে নেওয়া। ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে অর্থনীতি, ব্যবসা ও ফাইন্যান্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তার লক্ষ্য ছিল— ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার হওয়া। কিন্তু ২০০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা ভেঙে দেয় সেই স্বপ্ন। চাকরির সুযোগ হারিয়ে দেশে ফিরে আসেন পরিণীতি। কেউ হয়তো এ জায়গায় ভেঙে পড়তেন, কিন্তু তিনি বেছে নেন নতুন দিক—চলচ্চিত্রের পর্দার পেছনের কাজ।

বিশেষ করে ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা নেহালের জীবনীভিত্তিক সিনেমাটি ছিল তার নিবেদন অনবদ্য। সাইনার মতো খেলোয়াড়ের জীবনের প্রতিটি অনুপ্রেরণার মুহূর্তকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন অকৃত্রিম অভিনয়ে।

স্বামী হিসাবেও অভিনেত্রী পেয়েছেন এক সাহসী যোদ্ধাকে। যিনি আম আদমি পার্টির নেতা রাঘব চাড্ডা। পরিণীতি চোপড়া ও রাঘব চাড্ডা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্থানের উদয়পুরে জমকালো আয়োজনে বিয়ে করেন। চলতি বছরের আগস্ট মাসেই তারা যৌথভাবে প্রথম সন্তান আসার সুখবর সামাজিক মাধ্যমে ভক্ত-অনুরাগীদের শেয়ার করে নিয়েছিলেন। আর দীপাবলির ঠিক আগেই এ তারকা দম্পতির ঘরে এলো নতুন অতিথি। তারা পুত্রসন্তানের বাবা-মা হলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ