বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫৪ পূর্বাহ্ন

মঞ্জু, মনা নাকি তুহিন, তিন হেভিওয়েটের কে হচ্ছেন প্রার্থী?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৮ প্রদর্শন করেছেন

খুলনা-২ আসন নিয়ে জমে উঠেছে বিএনপির মনোনয়ন লড়াই। নানা নাটকীয়তার পর সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু হাইকমান্ডের ডাক পাওয়ায় এ আসন ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ত্রিমুখী হয়ে উঠেছে।দলীয় নেতাকর্মীরা ধারণা করছেন, এই আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী কে হচ্ছেন, সেটি নিয়ে চমক অপেক্ষা করছে। তিন হেভিওয়েট এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তারা হলেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।

২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ হারান খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পান বর্তমান নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। এই ঘটনার পর নজরুল ইসলাম মঞ্জু তার অনুসারীদের নিয়ে খুলনা প্রেস ক্লাবের ব্যাংকুয়েট হলে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তার অনুসারী শত শত নেতাকর্মী। এরপরই তাকে কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সম্প্রতি গুলশান কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ডাক পড়ায় গেল চার বছরের সব হিসাব-নিকাশ ওলোট-পালট হয়ে যায়। কারণ এই আসনের তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থীই হেভিওয়েট। এমন অবস্থায় খুলনার-২ আসনে আগামীতে দলীয় মনোনয়ন কে পাচ্ছেন এটাই এখন আলোচনার বিষয় হয়ে গেছে।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু এক সময় খুলনা অঞ্চলে বিএনপির স্তম্ভ ছিলেন। তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন।নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি পদে ছিলেন। কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও লড়েন। নগর কমিটি থেকে বাদ পড়ায় ক্ষুব্ধ হন মঞ্জু। তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

২০২১ সালে পদ থেকে বাদ দেওয়ার পরও মাঠ ছাড়েননি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বিভিন্ন ব্যানারে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেছেন তার অনুসারীদের দিয়ে। খুলনায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সমাবেশে তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে শোডাউনসহ মিছিলও করেছেন। ঈদ, পূজাসহ সব সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখলেও দল থেকে পাননি তেমন মূল্যায়ন। এমনকি সমাবেশের মঞ্চে আসনটি পর্যন্ত পাননি। যার ফলশ্রুতিতে কর্মীদের সঙ্গে মাঠে বসে সমাবেশে অংশ নেওয়ার নজির রয়েছে অনেক।

এদিকে খুলনা-২ আসনে আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসাবে সবচেয়ে বেশি প্লাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন বর্তমান মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। তার পাশাপাশি নজরুল ইসলাম মঞ্জুও ধানের শীষের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এরপর হঠাৎ করে চলতি মাসে নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনাও সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসাবে প্রচারণা শুরু করেন।

মহানগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে পৃথক কর্মসূচি পালন করা শুরু করলেন। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে কানাঘোসা শুরু হলে কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতার হস্তক্ষেপে শফিকুল আলম মনা এবং শফিকুল আলম তুহিন যৌথভাবে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ধানের শীষের প্রচারণা শুরু করেন।

এর আগে ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত মঞ্জু এই আসনটির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতাকে পরাজিত করে। সেই হিসাবে এই আসনটিতে তার গ্রহণযোগ্যতা তিনজনের মধ্যে বেশি বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।

তবে কেন্দ্রীয় বিএনপির একটি সূত্র যুগান্তরকে জানান, সব আগ্রহী প্রার্থীদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডেকেছেন আগামীতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য, কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়। বিষয়টি এমনও হতে পারে এখানে তিনজনের মধ্যে কাউকে দেবেন অথবা নতুন কোনো চমকও থাকতে পারে। এটা তিনি দেশে আসার পর সিদ্ধান্ত হবে।

সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খুলনার জনপ্রিয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে ডেকেছেন এটা আমাদের বড় পাওয়া। আমরা চাই আগামীতে খুলনা-২ আসনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। পাশাপাশি তার বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদটিও ফেরত দেওয়ার দাবি জানাই।

সদর থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান অপু যুগান্তরকে জানান, খুলনার আপামর জনসাধারণের ভালোবাসার মানুষ মঞ্জু ভাই। তাকে খুলনার সর্বস্থরের মানুষ ভালোবাসে। খুলনাবাসীর আশা আগামীতে মঞ্জু ভাই ধানের শীষের মনোনয়ন পাবেই।

এসব বিষয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু যুগান্তরকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত আমাকে ফোন করেছিলেন এবং এসএমএসের মাধ্যমে সোমবার বিকালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনলাইন মিটিংয়ে অংশ নিতে গুলশান কার্যালয়ে থাকতে বলেছেন। দীর্ঘদিন পর হলেও আমাকে তিনি ডেকেছেন এটা বড় একটা পাওয়া। তার নির্দেশমতে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুলনা-২ আসনে ধানের শীষের প্রচারণা চালিয়েছি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ