সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০ পূর্বাহ্ন

সুদানে জাতিগত হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় জাতিসংঘের নিন্দা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৪ প্রদর্শন করেছেন

সুদানের এল ফাশের শহরে গণহত্যা ও জাতিগত হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কূটনীতিক ও জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) সপ্তাহান্তে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।

এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জাতিগত হত্যার বিস্তৃত রিপোর্টের পর যুক্তরাজ্য, যা জাতিসংঘে সুদানের বিষয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করে, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানায়।

আফ্রিকার জন্য জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মার্থা আমা আকইয়া পবি বলেন, ‌‘পরিস্থিতি এক কথায় ভয়াবহ। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় এল ফাশের ও আশপাশে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথি পেয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও বাড়ি বাড়ি তল্লাশির সময় নির্বিচারে হত্যার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। মানুষ শহর ছাড়ার চেষ্টা করলেও কেউ নিরাপদ নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাইরের সহায়তাই এই সংঘাতকে জিইয়ে রাখছে। অস্ত্র ও যোদ্ধারা এখনও সুদানে প্রবেশ করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করছে।’

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব টম ফ্লেচার বলেন, ‘এল ফাশের এমনিতেই মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রস্থল ছিল, এখন এটি আরও ভয়াবহ নরকে পরিণত হয়েছে।’

তিনি সৌদি মাতৃত্ব হাসপাতাল এলাকায় প্রায় ৫০০ জন নিহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানান এবং জানান, হাজার হাজার মানুষ তাওইলায় পালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নারী ও শিশুরা নির্যাতন, অপহরণ ও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন।

নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে, সাম্প্রতিক সহিংসতা বেসামরিক জনগণের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। পরিষদের সদস্যরা আরএসএফের হাতে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, নির্বিচার আটক ও তাৎক্ষণিক মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানান।

এই অধিবেশনটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) জন্য অস্বস্তিকর ছিল, কারণ দেশটি আরএসএফের প্রধান বহিঃসমর্থক হিসেবে পরিচিত। তবে জাতিসংঘের কাছ থেকে গণহত্যা প্রতিরোধে সরাসরি হস্তক্ষেপের আহ্বান ছিল সীমিত।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্টিফেন ডাউটি পার্লামেন্টে বলেন, ‘আরএসএফের অগ্রযাত্রায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ভয়াবহ ও গভীর উদ্বেগজনক।’

লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র ক্যালাম মিলার যুক্তরাজ্যের সব অস্ত্র রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার আহ্বান জানান যতক্ষণ না প্রমাণ হয় যে সেসব অস্ত্র সুদানে আরএসএফের হাতে যায়নি।

‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সুদানে ব্রিটিশ সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রমাণ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপিত হয়েছে। ডাউটি স্বীকার করেন যে কিছু যুক্তরাজ্যে তৈরি সামগ্রী পাওয়া গেছে, তবে তা অস্ত্র নয় বলে দাবি করেন।

আমিরাত সরকার বারবার জানিয়েছে, তারা আরএসএফকে কোনো সামরিক সহায়তা দেয়নি। দেশটির এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমরা কোনো পক্ষকেই সহায়তা দিইনি এবং উভয় পক্ষের সংঘটিত বর্বরতার নিন্দা জানাই।’

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আমিরাত  নেতৃত্বের ওপর লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন আমিরাতের কাছে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, মিশর ও ইউএই নিয়ে গঠিত ‘কোয়াড’ শান্তি রোডম্যাপ প্রকাশ করে, যাতে তিন মাসের মানবিক যুদ্ধবিরতি, স্থায়ী অস্ত্রবিরতি এবং নয় মাসের মধ্যে বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ