রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪১ অপরাহ্ন

২০ বছরের নির্মাণকাজ শেষে মিশরে চালু হলো ১০০ কোটি ডলার খরচের জাদুঘর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩ প্রদর্শন করেছেন

দীর্ঘ দুই দশকের অপেক্ষা শেষে অবশেষে কায়রোতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর — গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বিশাল জাদুঘরটি, যা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার প্রতি উৎসর্গীকৃত।

গিজার পিরামিড থেকে মাত্র এক মাইল দূরে অবস্থিত ৪ লাখ ৭০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এই স্থাপনার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয় ১৯৯২ সালে, তবে নির্মাণ শুরু হয় ২০০৫ সালে। জাদুঘরের কিছু অংশ ২০২৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছিল।

জাদুঘরে রাখা হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি নিদর্শন, যার মধ্যে রয়েছে ৩,২০০ বছর পুরোনো রামেসিস দ্বিতীয়ের ৮৩ টন ওজনের বিশাল মূর্তি এবং খুফু ফেরাউনের ৪,৫০০ বছর পুরোনো রাজকীয় নৌকা— যিনি গিজার বিখ্যাত পিরামিড নির্মাণের জন্য পরিচিত।

গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামে রয়েছে ২৪ হাজার বর্গমিটারের স্থায়ী প্রদর্শনী স্থান, শিশু জাদুঘর, শিক্ষা ও সম্মেলন কেন্দ্র, বাণিজ্যিক এলাকা এবং একটি অত্যাধুনিক সংরক্ষণাগার। ১২টি প্রধান গ্যালারিতে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে রোমান যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রত্নবস্তু যুগ ও বিষয়ভিত্তিকভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে।

জাদুঘরের অধিকাংশ নিদর্শন পূর্বে কায়রোর তাহরির স্কোয়ারে অবস্থিত শতবর্ষী ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিছু প্রত্নবস্তু সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে সাকারা নেক্রোপলিসসহ আশেপাশের প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র থেকে।

জাদুঘরের প্রধান নির্বাহী আহমেদ ঘোনেইম জানান, এখানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে— মিক্সড রিয়েলিটি ও মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রাচীন ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা জেনারেশন জেড-এর ভাষায় কথা বলছি। তারা প্রচলিত লেবেল পড়তে চায় না, তারা প্রযুক্তির মাধ্যমেই ইতিহাসকে জানতে চায়।

জাদুঘরটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন একাধিকবার পিছিয়ে যায়, সর্বশেষ জুলাই মাসে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত—বিশেষ করে গাজা সংকটের কারণে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে গিজা পিরামিডে আতশবাজির মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং নতুনভাবে নির্মিত হাঁটা পথের মাধ্যমে পিরামিড ও জাদুঘরকে সংযুক্ত করা হয়েছে।

গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম মিশরের বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ, যার মধ্যে নতুন মেট্রো লাইন ও ২০২০ সালে চালু হওয়া বিমানবন্দরও রয়েছে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও কোভিড মহামারির পর মিশরের পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারের পথে। ২০২৪ সালে দেশটিতে রেকর্ড ১ কোটি ৫৭ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন, এবং সরকার ২০৩২ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছে।

হাসান আল্লাম হোল্ডিং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী হাসান আল্লাম জানান, প্রতিদিন ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার দর্শনার্থী আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্ব অপেক্ষা করছিল—এখন সবাই উচ্ছ্বসিত।

মিশরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্বমন্ত্রী শরিফ ফাথি বলেন, এটি বিশ্বের জন্য মিশরের উপহার। অবশেষে আমরা তা ভাগাভাগি করতে পারছি—এতেই আমাদের গর্ব।

তবে উদ্বোধনের আগমুহূর্তে প্রত্নবস্তু নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কায়রোর এক জাদুঘরের সংরক্ষণাগার থেকে ৩ হাজার বছর পুরোনো সোনার ব্রেসলেটসহ দুটি প্রত্নবস্তু চুরি হয়েছে। ২০১১ সালের আরব বসন্তের সময়ও বহু প্রত্নস্থল লুট হয়েছিল।

নতুন এই জাদুঘর শুধু প্রাচীন মিশরের ঐতিহ্যই নয়, বরং আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য এক কৌশলগত সাংস্কৃতিক বিনিয়োগ হিসেবেও দেখা হচ্ছে— যা মিশরকে পর্যটন ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধিতে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিতে পারে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ