বাজার সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমাদেরকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে। এখনো বাজার সিন্ডিকেট যারা করে আছে তাদেরকে কেন ধরছেন না? কেন পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সয়াবিন তেলের দাম বাড়বে, কেন সব কিছুর দাম বাড়বে? আপনাদেরকে তো জনগণের কাছ থেকে শুভেচ্ছা দেওয়া হয়েছে, সমর্থন দেওয়া হয়েছে। তবে কেন দাম বাড়বে? সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করে জনগণকে স্বস্তি দিন।’
রাজধানীর উত্তরার আজমপুরের আমির কমপ্লেক্সের সামনে মঙ্গলবার সকালে ডেঙ্গু চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে সচেতনতার লক্ষে এক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
পরে রুহুল কবির রিজভী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ডেঙ্গু চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে সচেতনতার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করেন।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া ৮০৩ পুলিশের উপ-পরিদর্শককে (এসআই) বিভিন্ন থানায় পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে খবর পাচ্ছি। এরা কেউ নিরপেক্ষ নন। তারা সবাই শেখ হাসিনার ক্যাডার। এদের মধ্যে ২০০ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে, যাদের বাড়ি গোপালগঞ্জে। বাকিগুলো ছাত্রলীগ ও যুবলীগের। এছাড়া এএসপি আছেন ৬২/৬৩ জন-তারাও শেখ হাসিনার আমলের। এখানে কোনো নিরপেক্ষভাবে যাচাই-বাছাই হয়েছে? এখানে নিরপেক্ষভাবে কোনো কম্পিটিশন হয়েছে, হয়নি। আরো অনেক ঘটনা আছে। এএসপির ৬২/৬৩ জন আর ৮০৩ জন উপ-পরিদর্শক তারা কারা? কী করে এক জেলা গোপালগঞ্জের ২০০ জন লোক পুলিশের এসআইয়ে ঢুকতে পারে? অন্তর্বতীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বলতে চাই আবার পুনঃতদন্ত করুন। এসব এসআই ও এএসপি ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত সাপ হয়ে গোটা বাংলাদেশকে নীল বিষে ভরিয়ে দেবে।
বিএনপির অন্যতম এই জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা গোটা বাংলাদেশকে যেন গণকবরে পরিণত করেছিলেন। শেখ হাসিনার সেই গণকবরে আর এ দেশের জনগণ যেতে চায়না। তিনি বলেন, আইনের শাসন কোথায়? আইনের শাসন আমরা আকাশের তারার মতো দেখতে পাই। ন্যায়বিচার আকাশের তারা যেমন দেখা যায়, ধরা যায় না- সে রকম আমরা দেখতে পেতাম। না ছিল ন্যায়বিচার-আইনের শাসন, না ছিল কথা বলার স্বাধীনতা। আয়না ঘরের কথা না হয় বাদই দিলাম। আয়না ঘরে সাত বছর, নয় বছর রাখা হয়েছে। কত লোক যে ধরে রেখেছে, সেখান থেকে চিরদিনের জন্য অদৃশ্য করে দিয়েছে তার কোন ঠিক নেই।
তিনি বলেন, গত জুলাই-আগস্টে যে আন্দোলনে শেখ হাসিনা গণহত্যা চালিয়েছে, সেখানে রিক্সাচালক মারা গেছে না? তার পরিবার খাবে কী? আমি নিজেও ১৪ জন নিহত রিক্সাওয়ালার বাড়িতে গিয়েছি, দেখেছি। আরো কত যে শ্রমিক মারা গেছেন। তাদের উপার্জনের কেউ নেই। সে পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল কিনবে? সে কাঁচা বাজারের জিনিসপত্র কিভাবে কিনবে? এগুলো আপনাদেরকে (অন্তর্বর্তী সরকার) মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। শুধু নিরপেক্ষতার কথা বলে চুপচাপ থাকলে মানুষের ক্ষোভ কিন্তু প্রশমিত থাকবে না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচন দেবে। গত ১৫ বছর ধরে জনগণ ভোট দিতে পারেনি, তারা ভোট দিতে চায়। তাই অনতিবিলম্বে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিবেন। যে নির্বাচনে জনগণ জনগণ ভোট দিবে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। তখনই পরিপূর্ণ গণতন্ত্র ফিরে আসবে। দেশের মানুষের আজকে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু হোমিওপ্যাথি পদ্ধতিতে চলবে না, আমাদের এন্টিবায়োটিক পদ্ধতি চলতে হবে। কারণ এদেশে প্রত্যেকটি আনাচে-কানাচে এখনো আওয়ামী লীগের প্রেতাত্তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে, ষড়যন্ত্রকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানদের দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা সব সময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছি। এখন ডেঙ্গুর প্রকট বেড়েছে। আমরা প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়, থানা-ওয়ার্ডের সব জায়গায় গিয়ে চেষ্টা করছি লিফলেট বিতরণ করে মানুষকে সচেতন করতে। আমরা সব বাসাবাড়িতে যাব, মানুষকে সচেতন করব।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল বলেছেন, মানুষের সেবা এবং মানুষের জীবন রক্ষাই হলো আমাদের প্রধান কর্তব্য। এই কর্তব্যকে সামনে রেখে ডেঙ্গুর ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে আবারো রাজপথে সম্মিলিতভাবে আমরা বাড়িতে বাড়িতে যাবো। ডেঙ্গুবিরোধী কর্মসূচিকে সফল করব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক নেতা আক্তার হোসেন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, মোস্তফা জামান, এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, এস এম জাহাঙ্গীর, জাসাসের হেলাল খান, জাকির হোসেন রোকন, উত্তর যুবদলের সাজ্জাদুল মিরাজ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আরিফুর রহমান তুষার, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সহ সভাপতি ডা. আউয়ালসহ উত্তরের ৭টি থানা ও সব ওয়ার্ডের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।