রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গভীর রাতে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একটি বাসা থেকে ৮৫ লাখ টাকা ও ৫০ ভরি স্বর্ণ ও কয়েকটি মোবাইল ফোন লুটপাট করে নিয়ে যায় তারা। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।রিমান্ডে নিয়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। আইন প্রয়োগের দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিরাই মিলেমিশে যোগ দিয়েছেন ডাকাতির মতো অপরাধে। একাধিকবার অপরাধ সংঘটনের পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাহিনীর পোশাকে ডাকাতির ঘটনায় অভিযোগের পর নজরে আসেন তারা।জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে স্বীকার করছেন এবং জানাচ্ছেন আড়ালে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূমিকা। যাদের মধ্য থেকে সামরিক বাহিনীর চাকরিচ্যুত ৫ সদস্যকে নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী ও র্যাব। অপর ৬ বেসামরিক অভিযুক্তকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন স্থানে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরুর পর ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল সংঘবদ্ধ হয়। যাদের মধ্যে সেনাবাহিনী, র্যাব ও বিমানবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন-এমন ব্যক্তিসহ একাধিক বেসামরিক সদস্যও রয়েছেন। তারা বিভিন্ন এলাকায় যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে অন্তত চারবার অপরাধে জড়িয়েছেন। সবশেষ মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগীর অভিযোগের পর বিষয়টি সামনে আসে। সংঘবদ্ধ এ চক্রের নেতৃত্বে শীর্ষ দুই কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তাদের একজন সেনাবাহিনীর বর্তমান এবং একজন সাবেক মেজর এই দলবদ্ধ অপরাধে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়া গ্রেফতার ৩ চাকরিচ্যুত সদস্যের নাম জানা গেছে। তারা হলেন সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোস্তফা, সৈনিক আরিফ, সার্জেন্ট ইমাম।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস যুগান্তরকে বলেন, গ্রেফতার সেনাবাহিনীর চার এবং বিমানবাহিনীর একজন সদস্যকে (চাকরিচ্যুত) নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তাদের সঙ্গে র্যাবের কোনো সদস্য এবং অন্যান্য বাহিনীতে কর্মরত কেউ জড়িত কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে সেনাবাহিনী এবং আমরা একসঙ্গে কাজ করছি। তারা যাদের নাম (আনুমানিক ১৭ জন) বলছে, তারা জড়িত ছিলেন কি না-সেটা খতিয়ে দেখছি। আমরা তাদের নিয়ে আরও কয়েকটি অপারেশনে গিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে রোববার রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে ৫ জন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ৭ লাখ টাকা, কিছু স্বর্ণালংকার এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়। তবে তাদের পরিচয় জানায়নি র্যাব। এছাড়া এ ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন ৩ বেসামরিক সদস্য। সোমবার ৬ বেসামরিক সদস্যকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই রাশেদুল ইসলাম ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন তাদের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ভুক্তভোগী আবু বক্কর শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ১১ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩টায় ৪টি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কারে সেনাবাহিনী, র্যাবের ইউনিফর্ম ও কটি পরিধান করা রাইফেল ও দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ২৫-৩০ জন আমার বাসার সামনে আসে। পরে দারোয়ান জামসেদের কাছে নিজেদের সেনাবাহিনী ও র্যাব সদস্য পরিচয় দেন। তারা আমার বাসায় অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানোর কথা জানিয়ে ভেতরে ঢোকেন। পরে তারা ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে সজোরে ধাক্কাতে থাকেন। বাসায় স্ত্রী, মেয়ে ও আমি ছিলাম। আমি ভয়ে দরজা খুলতে অপারগতা প্রকাশ করি।
একপর্যায়ে দরজায় থাকা দুরবিন দিয়ে বাইরে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরা অনেক লোক দেখতে পাই। দারোয়ান জামসেদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে দরজা খুলে দিলে ভেতরে ১৪-১৫ জন ঢুকেন। তারা আমার বাসা ও অফিসের তিনটি স্টিলের আলমারি, ১টি ওয়্যারড্রব, ২টি সিন্দুক, ১টি শোকেস দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে ভাঙতে শুরু করে। এ সময় আমি ও আমার পরিবারকে তারা অস্ত্র দিয়ে আঘাতের ভয় দেখায়। তারা টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র দুটি বস্তায় ভরে নিয়ে যায়। বাড়ির পঞ্চমতলা থেকে ভুক্তভোগীর ভাতিজা মোমিন হোসেন ওই বাসায় এসে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে তার মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, দুর্বৃত্তদের কারও কারও মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল। কারও কারও মাস্ক ছিল না।