মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন

ইসরাইলের হামলায় খামেনির সতর্ক প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৬ প্রদর্শন করেছেন
আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরাইলের হামলার বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের হামলাকে ‘অতিরঞ্জিত কিংবা কমিয়ে’ দেখা ঠিক হবে না। তবে তিনি তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিশোধ বা পাল্টা পদক্ষেপের কথা বলেননি।

অপরদিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, এই হামলার ‘যথাযথ জবাব দেবে’ ইরান। তবে তিনি এটাও পরিষ্কার করেছেন, তেহরান যুদ্ধ চায়নি। শনিবারের ওই হামলায় ইরানের চার সেনা নিহত হয়েছেন।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইসরাইলের হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই তারা বিষয়টি নিয়ে ‘ইঙ্গিত পেয়েছিল’। আমরা সন্ধ্যা থেকেই রাতের সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে ইঙ্গিত পাচ্ছিলাম। তবে এ বিষয়ে আব্বাস আরাঘচি সাংবাদিকদের বিস্তারিত কোনো তথ্য দেননি। রোববার এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান।

অন্যদিকে ইসরাইল বলেছে, ইরানের হামলার জবাব দিতে তারা দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। গত ১ অক্টোবর ইসরাইলকে লক্ষ্য করে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।

রোববার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইল ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন সিস্টেম বিকল করে দিয়েছে। হামলায় ইরানের প্রতিরক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র বানানোর সক্ষমতার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

এক অনুষ্ঠানে নেতানিয়াহু বলেন, ওই হামলা ছিল সুনির্দিষ্ট ও শক্তিশালী এবং এতে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে নিহতদের স্মরণে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

ইরানের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে ইসরাইলের হামলার প্রভাবকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। তারা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রই প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। আর যেগুলো ঠেকানো যায়নি সেগুলো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সামান্য ক্ষতি করেছে।

ওই হামলার পর প্রথমবারের মতো মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেন, এটা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবেন যে, তারা কিভাবে ইরানি জনগণের ইচ্ছা ও শক্তিকে ইসরাইলি সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন এবং দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষায় ব্যবস্থা নেবেন।

প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানও তার দেশের সর্বোচ্চ নেতার সুরেই কথা বলেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু আমরা দেশ ও জাতির অধিকারকে সমুন্নত রাখবো।

পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলের ওই হামলার পাল্টা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য ইরানের প্রতি আহবান জানিয়েছে। তাদের আশংকা পাল্টাপাল্টি হামলার যে চক্র তা ওই অঞ্চলকে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

ইরানের রাষ্ট্রায়াত্ত গণমাধ্যম হামলার পর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ফুটেজ প্রচার করেছে। পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, এটি জনগণকে আশ্বস্ত করার জন্য ইচ্ছে করেই করা হয়েছে।

এদিকে লেবাননে ইসরাইল ও ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ এবং গাজায় ইসরাইলের সঙ্গে হামাসের লড়াই অব্যাহত আছে। এর আগে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। পরে লেবানন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটির দক্ষিণে ওই হামলায় মোট ২১ জন নিহত হয়েছে।

অন্যদিকে গাজায় আল শাতি শরণার্থী শিবিরের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরাইলি হামলার নয়জন নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনের গণমাধ্যম ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, নিহতদের মধ্যে তিনজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক।

অন্যদিকে তেল আবিবে একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে একটি ট্রাক বাসকে আঘাত করলে একজন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। তবে কর্তৃপক্ষ এ ঘটনাকে ‘সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হামলা’ মনে করছে।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি রোববার গাজায় দুদিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে চারজন ইসরাইলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়ের কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, ১০ দিনের মধ্যে এ ধরনের সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর একে স্থায়ী করার বিষয়ে আলোচনা শুরু করা উচিত। যদিও হামাসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য তাদের দেওয়া শর্ত ইসরাইল কয়েক মাস ধরে নাকচ করে আসছে এবং সে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

সামি আবু যুহরি বলেন, তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং বন্দিবিনিময় চুক্তির দাবিতে অটল রয়েছেন। এসব শর্ত পূরণের নিশ্চয়তা না পেলে যে কোনো চুক্তিই অর্থহীন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ