উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন বৃহস্পতিবার একটি দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) পরীক্ষা করেছেন, যাকে তিনি তার দেশের ‘শক্তিশালী কৌশলগত অস্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এই ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা দেশটির নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলা শত্রুদের জন্য এক সতর্ক সংকেত বলেও মনে করছেন কিম।
একে শত্রুদের বিরুদ্ধে ‘যথোপযুক্ত সামরিক পদক্ষেপ’ উল্লেখ করে কিম জং উন বলেন, এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা এমন একটি সামরিক পদক্ষেপ, যা পুরোপুরি শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধের প্রয়োজন মেটায়। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে আঞ্চলিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছে এবং আমাদের প্রজাতন্ত্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা।
নতুন রেকর্ড
বৃহস্পতিবারের পরীক্ষাটি উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘতম পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ছিল। যেটি ৮৭ মিনিটের জন্য আকাশে ভাসমান ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার মতে, এটি উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
এটি পিয়ংইয়ংয়ের কাছাকাছি অঞ্চল থেকে নিক্ষেপ করা হয় এবং জাপানের ওকুশিরি দ্বীপের পশ্চিমে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আঘাত হানে।
এ বিষয়ে জাপান সরকার জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি ৭,০০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছায় এবং ১,০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে।
এর আগে, গত বছর ডিসেম্বরে পরীক্ষা চালানো হুয়াসং-১৮ নামের ক্ষেপণাস্ত্রটির মতো এটি সলিড প্রোপেল্যান্ট এবং একটি রোড লঞ্চার থেকে নিক্ষেপ করা হয়। যা ১৫,০০০ কিলোমিটার (৯,৩০০ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম।
একদিন আগেই সিউল জানিয়েছিল যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই উত্তর কোরিয়া আবারও আইসিবিএম পরীক্ষা চালাতে পারে বা সপ্তম পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা এটির মাধ্যমে তাদের সামরিক শক্তির প্রদর্শন করতে চাচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার ১১ হাজার সেনা মোতায়েন করার অভিযোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবারের এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর ফলে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা ও উদ্বেগ বেড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা জানিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার সামরিক বিশেষজ্ঞ শিন সুং-কি জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাটি সম্ভবত একটি বিদ্যমান আইসিবিএমের উন্নত বুস্টার ক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে ছিল এবং এতে রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তা থাকতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিক্রিয়া
উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন এবং তার দক্ষিণ কোরিয় মিত্র কিম ইয়ং-হিউন ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন এবং উত্তর কোরিয়ার রাশিয়ায় সেনা মোতায়েনের তীব্র নিন্দা জানান।
দক্ষিণ কোরিয়া জানায় যে, এই সেনা মোতায়েন তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। কারণ উত্তর কোরিয়া এতে আধুনিক যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং মস্কো থেকে পারমাণবিক ও কৌশলগত অস্ত্রের প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে। সূত্র: রয়টার্স ও জিও নিউজ