প্রতি বছরের মতো এবছরও বিশ্বের সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ২০২৪ সালের এ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র নারী রিক্তা আখতার বানু। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) তালিকাটি প্রকাশ করেছে বিবিসি।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানটি পৃথক পাঁচ বিভাগে বেছে নিয়েছে ১০০ নারীকে। বিভাগগুলো হচ্ছে জলবায়ুকর্মী, সংস্কৃতি ও শিক্ষা, বিনোদন ও ক্রীড়া, রাজনীতি ও অ্যাডভোকেসি এবং বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি। এসবের মধ্যে বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের নারী রিক্তা।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করেন রিক্তা আখতার বানু। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ নার্স তিনি।
১৯৯৯ সালে রিকতার কোলজুড়ে আসে প্রতিবন্ধী কন্যা তানভীন দৃষ্টিমনি (ব্রহ্মপুত্র)। তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে লেখাপড়ার জন্য ২০০৭ সালে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়, কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষ তিনবার তাকে প্রতিবন্ধী হিসেবে তাড়িয়ে দেয়। এরপর রিক্তা চেষ্টা করেন তানভীনকে পুনরায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে, কিন্তু বহু অনুরোধ সত্ত্বেও, কয়েকদিনের মধ্যেই শিক্ষকরা তাকে আর পড়াতে চাননি।
এই যন্ত্রণা থেকেই রিক্তা আখতার বানু নিজের জমি বিক্রি করে ২০০৯ সালে গড়ে তোলেন রিক্তা আখতার বানু (লুৎফা) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। স্কুলটিতে এখন প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
প্রতিবন্ধিতার ব্যাপারে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে তার এই প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিকভাবে এটি প্রতিবন্ধী বা শেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে বর্তমানে এটি বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার শিশুশিক্ষার্থীদের সেবা প্রদান করছে।
প্রসঙ্গত, বিবিসির চলতি বছরের বিশ্বের অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীদের এই তালিকায় জায়গা করে নেয়া অন্যদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদ, নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস, ধর্ষণের শিকার হওয়া জিসেস পেলিকট।
এছাড়াও রয়েছেন হলিউড অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, অলিম্পিক অ্যাথলেট রেবেকা আন্দ্রাদে ও অ্যালিসন ফেলিক্স, সংগীতশিল্পী রে, ভিজ্যুয়াল অ্যার্টিস্ট ট্রেসি এমিন, জলবায়ুকর্মী আদেনিকে ওলাদোসে, লেখক ক্রিস্টিনা রিভেরা গারজাসহ আরও অনেকে।