যারা সংস্কৃতি চর্চা করেন তারা তো সবার প্রতি একই ধরনের উদারতা দেখাবেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য যে, আমি দেখেছি-আমাদের শাহবাগের সেই সাংস্কৃতিক আড্ডাগুলোতে পূজা-বড়দিন এগুলো নিয়ে আলোচনা হতো। কিন্তু ঈদ নিয়ে কথা বলা একটুও স্মার্ট হিসেবে মনে হতো না।
রোববার বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন অন্তর্বর্র্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর এটা স্রেফ সরকার পরিবর্তন না। একটা বড় বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে গেছে আমাদের দেশ। গত ১৫ বছরে আমাদের যে অধঃপতন হয়েছে— এটা বাইরে রাজনীতিগত অধঃপতন, আর ভেতরে সাংস্কৃতিক অধঃপতন। সাংস্কৃতিক অধঃপতনের জন্য কে দায়ী কারা দায়ী— এটা আলোচনা করা যাবে।
ফারুকী বলেন, এই যে আমরা কাউকে ‘অপর’ ভেবেছি আবার কেউ আমাদের ‘অপর’ ভেবেছে। আমি মনে করি, এই অপর ভাবা বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো কিছু না। সামনে এই বিপ্লবের পরে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ চাই এবং নতুন প্রজন্ম যে নতুন বাংলাদেশ চায়, আমি মনে করি, নতুন প্রজন্ম এই ‘অপরায়ন’ থেকে দূরে থাকতে চায়। তারা আমাদের বহু ভাষা, ধর্ম, মতের মানুষ মিলে মিশে থাকুক এটাই চায়। কেউ কাউকে হেয় না করুক এটা তারা চায়। যদি এটি করা যায়, তাহলে সত্যিকার অর্থে আমরা আলোকিত মানুষ হিসেবে তাদের গড়ে তুলতে পারবো। আমরা সেই আলোকিত মানুষ হওয়ার পথেই রওনা দিয়েছি। জুলাই সেদিকে আমাদের নিয়ে যাক।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার বেশ বড়রকমের ভুমিকা রাখে এবং তা অর্থনৈতিকভাবেও নানারকম সহযোগিতা করে। এখানে কিন্তু সরকারের নিজের কোনও টাকা নেই, টাকা জনগণের। জনগণের টাকা জনগণের কাজেই ব্যয় করতে হয়। এই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারও জনগণের কাজ এবং এই কাজে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকতে পারছে বলে আমি মনে করি যে, মন্ত্রণালয় তার কাজ ঠিকঠাক করছে। আমরা সামনে এই কাজ নিয়ে আরও এগোবো। আরও অনেক আলোচনা আমরা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে করবো। এটাকে কীভাবে আমরা আরও ছড়িয়ে দিতে পারি, সেটি নিয়ে কাজ করবো।
এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির সভাপতি শিক্ষাবিদ আবুল কাশেম ফজলুল হক। অনুষ্ঠানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ উপস্থিত ছিলেন।
এ বছর ৩টি গাড়ির মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলার ১২৮টি স্থানে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন করার কথাও অনুষ্ঠানে জানানো হয়।