বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন

মদ্যপ দুই পুলিশ কর্মকর্তার অশ্লীল নাচ ভাইরাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময়ঃ বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ২ প্রদর্শন করেছেন

মাদারীপুরের রাজৈর থানা পুলিশের দুই উপসহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এএসআই) একাধিক নারী নিয়ে অশ্লীল নৃত্যের কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রাজৈর থানায় কর্মরত ওই দুই এএসআইয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজৈর উপজেলা যুবলীগের কয়েক নেতাও। এতে সমালোচনার ঝড় বইছে জেলাজুড়ে।

 

বিষয়টি জানাজানির পরে ক্লোড করা হয়েছে অভিযুক্তদের। তবে পুলিশ সুপারের দাবি- শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় বিভাগীয় মামলা হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

 

অভিযুক্তদের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

 

জানা যায়, মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানায় দুই উপসহকারী পুলিশ পরিদর্শক মো. হাদিবুর রহমান ও স্বপন অধিকারীর চারটি ভিডিও ক্লিপ এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

 

ভিডিওতে দেখা যায়, তারা একটি টিনশেড ঘরে মদ্যপ অবস্থায় একাধিক নারীকে নিয়ে নাচানাচি করছেন। একই কক্ষে এক নারীকে জড়িয়ে ধরে কোলে নিয়ে চুমু খাচ্ছেন। এ সময় সিগারেটের ধোঁয়া উঁচিয়ে গানের তালে তালে উল্লাস করছেন। আবার কখনো যুবলীগের কয়েক নেতাও নাচের তাল দিচ্ছেন। ওই কক্ষের খাটে বসে তাদের সঙ্গে নারীদের নৃত্য উপভোগ করছেন রাজৈর উপজেলা যুবলীগ নেতা রাহাত হোসেনও।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের নটাখোলা জগদীসের বাড়ি ও আনন্দপুরের ভবতোশের বাড়ির সঙ্গে গ্যারেজে মাঝে-মধ্যেই আসর বসান বিভিন্ন শ্রেণির বখাটে। যেখানে মদ, গাঁজাসহ অবৈধ কর্মকাণ্ডও চলে।

 

অভিযোগ আছে, বিভিন্ন সময়ে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে বেশ কয়েকজন পলাতক যুবলীগ নেতাও সেখানে অশ্লীল কর্মকাণ্ড করে থাকেন। এমন কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে পরে পুলিশ কর্মকর্তারা।

 

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মাদ মাসুদ খান বলেন, পুলিশ বাহিনী শৃঙ্খলা মেনে কাজ করেন। কোনো অবস্থায়ই আইনের বাহিরে কিছু করতে পারেন না। যদি অন্যায় বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের কাজ করেন, তার সেই কাজের দায়ভার পুলিশ বিভাগ নেবে না। অভিযুক্তদের বিষয় জানতে পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। তিনি তাদের ক্লোজ করেছেন।

 

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহফুজুল হক জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। সব কিছু জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।

 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ভিন্ন ভিন্ন কথা বললেন অভিযুক্ত দুই উপসহকারী পুলিশ পরিদর্শক। এ বিষয়ে অভিযুক্ত স্বপন অধিকারী বলেন, আমি বিনদাস মানুষ, মাঝে মধ্যে একটু আমোদ-ফুর্তি করি। অনেক সময় আসামি ধরতে নানা কৌশল নিতে হয়। এতে যদি অন্যায় হয়, তাহলে আমি দোষী। আর অন্যায় না হলে কিছু করার নেই।

 

মো. হাদিবুর রহমান বলেন, আমার জন্মদিন উপলক্ষে কিছু দিন আগে বন্ধু-বান্ধব মিলে একটু আনন্দ-ফুর্তি করেছি; কিন্তু সেটা ভিডিও করে কে ভাইরাল করল, বিষয়টি বুঝে আসছে না। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রও হতে পারে। তবে আমি ভুল শিকার করছি, এ রকম কাজ আর কখনো করব না।

 

যুবলীগ নেতা রাহাত হোসেনের সঙ্গে ওই আসরে মাতলামি করেছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হাদিবুর রহমান বলেন, কে কে ছিল, সেটা জানি না। আমার বন্ধুরা মিলে এমন আয়োজন করেছিল, তাই সেখানে গিয়েছি। তাছাড়া আমাদের শরীরে কোনো ইউনিফর্ম ছিল না। সবারই কম-বেশি আনন্দ-ফুর্তি করার অধিকার আছে।

 

অন্যদিকে মাদারীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত শৃঙ্খলা মেনে কাজ করে। ইতোমধ্যে যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, সেটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কোনোভাবেই এটা কোন পুলিশের সদস্য করতে পারে না। তাৎক্ষণিক অভিযুক্তদের পুলিশ লাইন্সে ক্লোজ করা হয়েছে। অচিরেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় বিভাগীয় মামলা করা হবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

 

অভিযুক্ত এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্য, আসামিদের গ্রেফতার না করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে সহকর্মীদের মধ্যেও। তবে ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি হননি অনেকেই।

 

আর যুবলীগ নেতা রাহাত হোসেন পলাতক থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার পরিবার এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয়।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ