দেশের পাঁচটি ইসলামিক ব্যাংক একীভূত হয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক হিসেবে গড়ে উঠতে যাচ্ছে। তবে একীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব ব্যাংক শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুত হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এ ধাক্কা চরম, কারণ ব্যাংক কোম্পানি আইনে তাদের ক্ষতিপূরণের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংকের মোট আমানত প্রায় এক লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণের পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যক্তি আমানতকারীদের প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা ফেরত নিশ্চিত করার বিশেষ পরিকল্পনা করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীরাও নতুন ব্যাংকের শেয়ার পেতে পারেন। তবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এখনো কোনো সুরক্ষা নেই।
একীভূতকরণের খবরেই শেয়ারবাজারে বড় ধাক্কা লেগেছে। যেসব শেয়ার আগে দশ টাকার বেশি ছিল, এখন পাঁচ টাকার নিচে নেমে গেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যেই অর্ধেকের বেশি মূলধন হারিয়েছেন। যারা আরও বেশি দামে শেয়ার কিনেছিলেন, তাদের ক্ষতি আরও বড়। বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নানা কৌশলে ক্ষতি সামাল দিতে পারলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব।
এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারের ৩০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের ৬৫ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর। গ্লোবাল, সোশ্যাল ও ইউনিয়ন ব্যাংকেও যথাক্রমে ৩১, ১৭ ও ৩০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে, তবে কোনো প্রস্তাব বা নিশ্চয়তা নেই। বিএসইসির সঙ্গে যৌথ বৈঠকের পরিকল্পনা থাকলেও ফলাফল অনিশ্চিত। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, বিএসইসি কার্যকর ভূমিকা নেবে, কারণ ব্যাংকগুলোর বিপর্যয়ে তাদের কোন দোষ নেই।
এ ব্যাংকগুলোর বেহাল দশা পুরো ব্যাংক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ডজনখানেক ব্যাংকের শেয়ার দশ টাকার উপরে লেনদেন হচ্ছে। এমনকি লাভজনক সিটি ব্যাংকও শেয়ারবাজারে ভালো করতে পারছে না। ২০২৪ অর্থবছরে এক হাজার কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের পরও সিটি ব্যাংকের শেয়ার ২৫ টাকায় আটকে আছে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব প্রতিফলিত করছে।