শাহরুখ খান, বলিউডে ‘বাদশা’ নামে যার পরিচিতি। ভক্তদের কাছে ‘কিং খান’। ১৯৮০ সালের দিকে টেলিভিশনে সিরিয়াল দিয়ে অভিনয় শুরু করা শাহরুখ খান ১৯৯২ সালে মিউজিক্যাল রোমান্টিক সিনেমা ‘দিওয়ানা’ দিয়ে বলিউডে অভিষিক্ত হন। কিন্তু নায়ক হিসাবে তাকে যেন মেনে নিতে পারছিল না বলিউডবাসী। প্রস্তাব দিলেন খলনায়ক হওয়ার। মাত্র ক্যারিয়ার শুরু। পায়ের তলায় মাটি শক্ত হওয়া তো দূরের কথা, এখনো নেই বললেই চলে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ১৯৯৩ সালে পরপর দুই সিনেমা ‘বাজিগর’ ও ‘ডর’-এ খলনায়ক হিসাবেই দাঁড়িয়ে গেলেন ক্যামেরার সামনে। আরও ফলাফলও পেয়েছেন হাতে হাতে। রব উঠে গেল শাহরুখের নামে। দুই সিনেমায়ই দেখিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইন্ডাস্ট্রি জয় করতেই এসেছেন। এরপর ফিরেছেন নায়ক হয়ে। ১৯৯৫ সালে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ সিনেমাটি শাহরুখকে ‘রোমান্টিক হিরো’র পোশাক জড়িয়ে দেয় গায়ে। এরপর ১৯৯৭ সালে ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ১৯৯৮ সালে ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়, ২০০০ সালে ‘মোহাব্বতেন’, ২০০১ সালে ‘কাভি খুশি কাভি গম’ ২০০৩ সালে ‘কাল হো না হো’-এসব সিনেমা শুধু শাহরুখের জনপ্রিয়তা বাড়ায়নি, তাকে বানিয়ে দিয়েছে বলিউডের বাদশা। ৯২ থেকে যে রাজত্বের শুরুটা হয়েছিল তা এখনো চলছে সমানতালে। একশরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মাঝে কিছুটা খেই হারিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের দিকে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। কোনোভাবেই যেন যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিলেন না। তাই দিলেন একটা লম্বা বিরতি। পাঁচ বছর। এ পাঁচ বছরে নিজেকে নিয়ে ভেবেছেন, পরিবর্তন করেছেন। ফিরেছেন ২০২৩ সালে, আবারও রাজা হয়েই। ফিরতি যাত্রায় এক বছরে দুটি ব্লকবাস্টার (পাঠান ও জওয়ান) এবং একটি হিট দিয়ে জানান দিলেন, ৬০ বছরেও যথেষ্ট জওয়ান শাহরুখ।
ক্যারিয়ারের খাতায় পুরোটাই প্রাপ্তিতে ভরা শাহরুখের। কোথাও কোনো অপ্রাপ্তি নেই। কাজে, সংসারে, ব্যক্তিগত জীবনে। কিন্তু একটা অপ্রাপ্তি ঠিকই ছিল। এই যে অভিনয়ে বিশাল ক্যারিয়ার, এর জন্য নেই কোনো জাতীয় স্বীকৃতি। বেসরকারি এবং আন্তর্জতাকিভাবে বহু পুরস্কারে ভূষিত হলেও খোদ ভারত সরকার বরাবরই তাকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখেছে যেন। কপালে জোটেনি কখনো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। অবশেষে ৩৩ বছর পর সে খরাও কাটল। ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য ২০২৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেলেন শাহরুখ খান। অনেকেই বলছিলেন, আসলে এ ৩৩ বছর শাহরুখ জাতীয় পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হননি, বরং জাতীয় পুরস্কারের ট্রপিটাই বঞ্চিত হয়েছে শাহরুখের হাতের স্পর্শ থেকে। সেই কথাটা জোর দিয়ে বলেছেন বলিউপের প্রবীণ অভিনেতা ও নির্মাতা অনুপম খের। তিনি বলেছেন, ক্যারিয়ারের শুরুতেই তার (শাহরুখ) জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল।’ বলিউডের তিন দশকেরও বেশি সময় পথচলা এ অভিনেতা ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক দুর্দান্ত সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তাকে যে সিনেমার জন্য এত বছর পর পুরস্কার দেওয়া হলো, তার চেয়েও কিন্তু অনেক ভালো ও দারুণ সিনেমা ছিল শাহরুখের। অথচ সেগুলো থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমকে অনুপম খের বলেন, “আমি সত্যিই ওর জন্য ভীষণ খুশি। অবশেষে ৩৩ বছর পর এ পুরস্কারে সম্মানিত হল শাহরুখ। তবে আমার মনে হয়, ২০০৬ সালেই ‘স্বদেশ’ সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল শাহরুখ খানের।’ তিনি আরও বলেন, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে, দেবদাস, কুচ কুচ হোতা হে, বীরজারা, পেহেলি-এমন অনেক সিনেমা রয়েছে যার জন্য শাহরুখকে জাতীয় পুরস্কারের সম্মানিত করা উচিত ছিল এবং তা একাধিকবার। যদিও তা হয়নি। তবে আমি খুব খুশি, অবশেষে পুরস্কারটা পেয়েছে।’
সব সিনেমার মাধ্যমে অনুপম খের ‘স্বদেশ’কেই ভোট দিয়েছেন বেশি। কারণ, এটি একটি কাল্ট ক্লাসিক সিনেমা। অবশ্য আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত এ সিনেমাটি সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হলেও বক্সঅফিসে বাণিজ্যিকভাবে ব্যর্থ হয়। তবে ৫০তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে শাহরুখ সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতে নেন। ওই বছর ‘হাম তুম’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার জিতেছিলেন সাইফ আলি খান।
এদিকে কাজের সূত্রে শাহরুখ বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছেন ‘কিং’ সিনেমা নিয়ে। এ সিনেমার মাধ্যমে মেয়ে সুহানা খানকে বড় পর্দায় উপস্থাপন করছেন তিনি। যদিও অভিনয়ে সিনেমার অভিষেক আরও আগেই হয়েছে ওটিটি মাধ্যমে। এবার অপেক্ষা বড় পর্দার। সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন, জ্যাকি শ্রফ, অনিল কাপুর, আরশাদ ওয়ার্সি, রানি মুখার্জি, অভিষেক বচ্চন, জয়দীপ আহলাওয়াত এবং অভয় ভার্মা।