দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ এই সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রীক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেছেন তারেক রহমান।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও বিবিসি বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আজ প্রকাশিত হয়েছে। এতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেন তারেক রহমান।
বিবিসি বাংলার তরফে প্রশ্ন ছিল, একটা বিষয় যদি বলি, পাঁচই আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এবং আপনিও জানেন যে, শেখ হাসিনা দিল্লিতে গেছেন এবং সেখানে আছেন। ভারতের সঙ্গে একটা সম্পর্কের শীতলতা দেখা গেছে, গত এক বছর ধরে। যেমন ধরুন সেটি যাওয়া আসার ক্ষেত্রে ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা রকম, সেই ক্ষেত্রে কী কোন পরিবর্তন আপনার সরকারে আসলে হবে বা পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন, এমন কোন চিন্তা কি আপনাদের আছে?
তারেক রহমান বলেন, এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের সঙ্গে শীতল থাকবে। সো, আমাকে আমার দেশের মানুষের সঙ্গেই থাকতে হবে।
বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে যেই সম্পর্ক ছিল, সেটা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। তো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আপনাদের নীতি কী হবে?
তারেক রহমান বলেন, আমার মনে হয়, আপনি একটু আগে যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেখানে বোধহয় আমি ক্লিয়ার করেছি পুরো ব্যাপারটা। সবার আগে বাংলাদেশ। এখানে তো আপনি পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটি দেশের কথা বলেছেন। এখানে ওই দেশ বা অন্য দেশ তো বিষয় না। বিষয় তো হচ্ছে, ভাই বাংলাদেশ আমার কাছে আমার স্বার্থ, আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখবো, আমার দেশের স্বার্থ দেখবো। ওটাকে আমি রেখে আপহোল্ড করে আমি যা যা করতে পারবো, আমি তাই করবো।
বিবিসি বাংলার আরও প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের স্বার্থ আপনারা সবার আগে নেবেন, সেটা আপনি পরিষ্কার করেছেন। ভারতের কথা বিশেষভাবে আসছে যেহেতু সেটি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং বাংলাদেশের তিন পাশেই এই দেশটির সীমান্ত রয়েছে। এবং এটি নিয়ে আপনিও জানেন যে, বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় তো সম্পর্ক নিয়ে বললামই সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বা কেমন থাকা প্রয়োজন- এ নিয়ে আপনার চিন্তা কি?
তারেক রহমান বলেন, অবশ্যই আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাইনা না যে, আরেক ফেলানী ঝুলে আছে। অবশ্যই আমরা এটা মেনে নেবো না।
বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে তারেক রহমানের কাছে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের স্বার্থের প্রসঙ্গে আপনি বলছেন যে, পানির হিস্যা চাওয়া এবং সীমান্ত হত্যার বিষয়টি নিয়ে আপনারা সোচ্চার থাকবেন?
তারেক রহমান এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, না না, আমি উদাহরণ দিয়ে বললাম। দুটো উদাহরণ দিয়ে বুঝালাম আপনাকে, যে আমাদের স্ট্যান্ডটা কি হবে। আমরা আমাদের পানির হিস্যা চাই। অর্থাৎ আমার দেশের হিস্যা, মানুষের হিস্যা আমি চাই, হিসাব আমি চাই। আমার যেটা ন্যায্য সেটা আমি চাই। অবশ্যই ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, আমার মানুষের উপরে আঘাত আসলে অবশ্যই সেই আঘাতকে এভাবে আমি মেনে নেবো না।