শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন

ট্রাম্পের ‘দম্ভের সিংহাসনে’ ফাটল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • প্রকাশের সময়ঃ বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩ প্রদর্শন করেছেন

দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার মসনদে বসার পর থেকেই নিজেকে অপ্রতিরোধ্য মনে করতেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এমনভাবে দেশ শাসন করছিলেন, যেন কোনো সাংবিধানিক সীমারেখারও প্রয়োজন নেই তার। বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যম ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন নিজের ইচ্ছামতোই। দেশের ভেতরে ও বাইরে, বহু দশকের কূটনৈতিক ও সাংবিধানিক রীতিনীতিকে উপেক্ষা করেছেন, শুরু করেছেন বাণিজ্য যুদ্ধ, মিত্র দেশগুলোকে ঠেলে দিয়েছেন দূরে। এ ছাড়া দেশটির শহরে শহরে সেনা পাঠিয়ে সৃষ্টি করেছেন সাংবিধানিক সংকট। বিভিন্ন সরকারি বিভাগ কার্যত অচল করে দিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়, গণমাধ্যম, করপোরেট জগত- সবকিছুকেই নিজের ইচ্ছার অধীনে আনার চেষ্টা করছিলেন ট্রাম্প।

অনেকেই বলছিলেন, স্বৈরশাসনের দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তার সেই ‘দম্ভের সিংহাসন’, যেটা তিনি এত যত্নে গড়ে তুলেছিলেন তাতে বড় ফাটল ধরতে শুরু করেছে। রাজ্য নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনি জয়, সুপ্রিমকোর্টে তার শুল্কব্যবস্থা নিয়ে বিচারপতিদের সংশয় এবং সংবিধানে তার তৃতীয় মেয়াদ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ভেঙে পড়ছে ট্রাম্পের ‘অজেয়তার কল্পজগৎ’। সিএনএন।

মঙ্গলবার নিউইয়র্কসহ ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সির গভর্নর নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা বড় জয় পেয়েছেন। এই ফলাফল দেখিয়েছে, সব জায়গায় ট্রাম্পের প্রভাব আগের মতো নেই। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ও ইলিনয়ের গভর্নর জে বি প্রিটজকার প্রকাশ্যে ট্রাম্পবিরোধী অবস্থান নিয়ে ভোটারদের উৎসাহিত করেছেন। এ ছাড়া একাধিক ডেমোক্র্যাট শাসিত রাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, তারা ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট স্বাস্থ্যনীতি মানবে না এবং নিজেদের নীতি তৈরি করবে। এদিকে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও ট্রাম্পের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যেমন : দর্শক ও বিজ্ঞাপনদাতাদের চাপে জিমি কিমেলের লেট-নাইট শো পুনরায় প্রচারে ফিরেছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দিয়েছে, তারা সরকারের আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। এসব ছোট ছোট প্রতিরোধই ভবিষ্যতে বড় আন্দোলনে পরিণত হতে পারে। যেভাবে জন্ম হয়েছিল নাগরিক অধিকার আন্দোলন বা ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের। তবে সহজে হার মানার মানুষও নন ট্রাম্প। বরাবরই দেখা যায়, তিনি প্রতিটি ধাক্কার জবাব দেন আরও আগ্রাসীভাবে। সাম্প্রতিক রাজ্য নির্বাচনের আগে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, যদি নিউইয়র্কবাসী নতুন মেয়র জোহরান মামদানিকে ভোট দেয়, তাহলে শহরটির তহবিল কেটে দেবেন তিনি। তবুও সেই শহরই তাকে প্রত্যাখ্যান করে মামদানিকে মেয়র হিসাবে বেছে নিয়েছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন জরিপেও দেখা যায়, জনগণের আস্থা ট্রাম্পের প্রতি কমছে। দেশের অর্থনীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। যদিও কয়েকটি রাজ্য নির্বাচনের ফল দিয়ে ভবিষ্যৎ পুরোপুরি নির্ধারণ করা যায় না, তবে এটা স্পষ্ট, রিপাবলিকানদের সামনে আরও কঠিন সময় আসছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের যে অগ্রগতি ছিল তা এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে। ট্রাম্পের ওপর নজর রাখছে বিচার বিভাগও। সম্প্রতি তার ‘জরুরি শুল্ক ক্ষমতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিমকোর্টের বিচারকরা। সবমিলিয়ে নড়বড়ে হতে শুরু করেছে ট্রাম্পের ক্ষমতার ভিত।

এদিকে মামদানি মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় নিউইয়র্ক শহর সার্বভৌমত্ব হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। বুধবার মিয়ামিতে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, মঙ্গলবার আমরা নিউইয়র্কে সামান্য কিছু সার্বভৌমত্ব হারিয়েছি। এ সময় নিজ দল রিপাবলিকানের সাম্প্রতিক নির্বাচনি পরাজয়গুলো এড়িয়ে যান তিনি। বরং নিজের নির্বাচনের বার্ষিকী উদ্যাপন করে বলেন, আজ থেকে এক বছর আগে আমরা দেখেছিলাম যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনি বিজয়। মামদানিকে উদ্দেশ করে করা ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্যও করেন তিনি। পরে আবার স্বর নরম করে বলেন, আমি চাই আমার জন্মভূমি নিউইয়র্ক সফল হোক। হয়তো আমি মামদানিকে সামান্য একটু সাহায্য করব। তবে এবার আর আগের মতো নিউইয়র্ক সিটির ফেডারেল তহবিল বন্ধের হুমকি দেননি ট্রাম্প।

প্রসঙ্গত, জোহরান মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম হিসাবে সবচেয়ে বড় শহর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন তিনি। কুমো ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ধরনের আরও সংবাদ